১৫ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন বিএটি’র শ্রমিকরা
শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে কোটি কোটি টাকা অনুদান দিলেও নিজেদের শ্রমিকদের বছরের পর বছর বঞ্চিত করে আসছে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটি)। এবার বেতন বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে রাতভর আন্দোলন করেছেন শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার রাত থেকে বিএটির ঢাকা ও সাভার ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করেছেন বলে জানা গেছে।
শ্রমিক রুহুল আমিন হৃদয় বলেন, ‘গতকাল রাতে আমাদের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মালিকপক্ষের বৈঠক হয়েছে। আমাদের প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা একটা মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে একটা টাইম সেট করা হয়েছে। আমাদের দাবিগুলো কতটুকু তারা মানতে পারবেন, কতটুকু মানতে পারবেন না। আগামী ২৯ তারিখ ফাইনাল ডিসিশন আসবে। যদি ২৯ তারিখ আমাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা না আসে, তারপর আমরা পরবর্তী কর্মসূচিতে যাবো।’
আরও পড়ুন
শ্রমিকরা জানান, আমরা দীর্ঘ দিন এই কোম্পানির অধীনে কাজ করছি। আমরা নানা সমস্যায় জর্জরিত এবং সীমাহীন অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকার। দিন দিন আমাদের সুযোগ সুবিধা সংকোচিত হচ্ছে। আমাদের সব শ্রমিকদের ওপর কাজের বোঝা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর বিনিময়ে আমাদের কিছু দেওয়া হয়নি। এছাড়া ঠিকাদার কোম্পানি (পি.এল.সি.এস) বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পোস্ট বিলুপ্ত করে আমাদের কর্মস্থান সংকোচিত করেছেন। গত কয়েক বছর তারা বিভিন্ন বিভাগে অন্তত শতাধিক পোস্ট বিলুপ্ত করেছে। এতে আমাদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছে এবং অনেক স্থায়ী থেকে অস্থায়ী শ্রমিক হয়ে গেছি। গত বছর ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে ১৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করলেও নিজেরদের শ্রমিকদের বঞ্চিত করে দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শ্রমিকদের ১৫ দফা দাবি :
১. সকল শ্রমিককে নিয়োগপত্র প্রদান করতে হবে এবং প্রত্যেকের বেতন সর্বনিম্ন ৫০% বৃদ্ধি করতে হবে।
২. কোম্পানির বার্ষিক লভ্যাংশের ২% প্রতিটা শ্রমিককে প্রদান করতে হবে।
৩. প্রতি বছর আমাদের বেতন ১৫% হারে বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. প্রতি বছরে মেডিকেল ছুটিসহ ৩০ দিন ছুটি দিতে হবে।
৫. হরতাল অবরোধ কর্মসূচিসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে অতিরিক্ত ঝুঁকিভাতা হিসেবে ৫০০ টাকা প্রদান করতে হবে।
৬. নাইট ডিউটি চলাকালে নাইট এলাউন্স প্রদান করতে হবে।
৭. অতি তাড়াতাড়ি আমাদের গ্রেজুয়েটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দিয়ে দিতে হবে এবং প্রতি এগ্রিমেন্টে শেষে টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে।
৮. ৩ মাস ৬ মাস বা ১ বছরের কোনও এগ্রিমেন্ট করা যাবে না, সর্বনিম্ন ২ বছরের এগ্রিমেন্ট করতে হবে।
৯. বেতনের সমপরিমাণ উৎসব ভাতা প্রদান করতে হবে।
১০. কোনও শ্রমিককে ছোট ছোট বিষয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে না এবং ভুলত্রুটি হলে তিনবার নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে।
১১. শ্রমিকের ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ দেওয়া যাবে না। এগ্রিমেন্টে উল্লেখিত কাজগুলোই শুধু সম্পাদন করবেন।
১২. কোম্পানির বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন; ফ্যামিলি-ডে, খেলাধুলা, পিকনিকসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. এক্সট্রা সবাইকে মাসিক বেতনের আওতায় আনতে হবে এবং বেতন বোনাস দিতে হবে।
১৪. কোম্পানি স্বেচ্ছায় কাউকে চাকরিচ্যুত করলে ৩ মাসের অগ্রিম বেতন প্রদান করতে হবে।
১৫. শতভাগ ইন্সুরেন্স ও মেডিকেল সুবিধা দিতে হবে।
এমএসআই/এমএসএ