ঢাকা-সিলেটে বড় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল আনসার আল ইসলামের

ঢাকা ও সিলেটে পুলিশ ও বিজিবির টহল টিমে হামলার পরিকল্পনা করেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। দেশে বড় ধরনের নাশকতা ঘটিয়ে আফগানিস্তানে হিজরত করতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল এর সদস্যদের।
এসব পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সংস্থাটির একটি টিম শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে তাদের গ্রেফতার করে।
যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন- মো. জসিমুল ইসলাম ওরফে জ্যাক, মো. আব্দুল মুকিত, মো. আমিনুল হক ও সজীব ইখতিয়ার। তাদের কাছ থেকে একটি ব্যাগ, একটা চাপাতি, ৫টি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার (৯ মে) দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের গ্রেফতার হওয়া সদস্যরা ঢাকা ও সিলেটে পুলিশ ও বিজিবির টহল টিমে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এ চক্রের বাকি দুই সদস্য হিজরতের উদ্দেশ্যে আফগানিস্তান গমন করে। এই চারজনেরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে কথিত হিজরতের মাধ্যমে আফগানিস্তান পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এজন্য তারা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে রেকি করে।
সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলামের সদস্যরা নিষিদ্ধ এই সংগঠনের আদর্শ বাস্তবতায়নের লক্ষ্যে অনলাইনে টেলিগ্রাম আ্যপে সায়েন্স প্রজেক্ট নামে গ্রুপ তৈরি করে সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে বিস্ফোরক প্রস্তুতের চেষ্টা করেছিল। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা ডিভাইস পর্যালোচনা করে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া সদস্যরা সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নির্দেশে সিলেটের কোতয়ালী থানা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে হোটেল ম্যানেজারকে আহত করে পালিয়ে যায়।
শনিবার যে চারজন গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মধ্যে জসিমুল হক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অতীশ দীপংকর ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। মো. আব্দুল মুকিত হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার মারকাজুস সুন্নাহ আল ইসলামিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। মো. আমিনুল হক সিলেটের আল হিদায়া ইসলামিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং মো. সজীব ইখতিয়ার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এখন পর্যন্ত কতজন জঙ্গি দেশ থেকে আফগানিস্তানে হিজরত করেছেন- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি তাদের সংগঠনের দুই জন সদস্য আফগানিস্তানে হিজরত করেছেন। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদেরও পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলা করে আফগানিস্তানে হিজরত করার।
পুলিশের ওপর জঙ্গিদের লক্ষ্য বহুদিন ধরেই দেখা গেছে কিন্তু হঠাৎ করে বিজিবির উপর তাদের হামলার লক্ষ্য কেন হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তারা তাগুতের ক্যাটাগরিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রেখেছে।
আফগানিস্তানে যে জঙ্গিরা হিজরত করেছেন তাদের সেখানকার কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করার তথ্য পেয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমাদের দেশে যে কয়টি জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় তাদের অধিকাংশই আল-কায়েদার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে দাবি করে। আনসার আল ইসলাম উপমহাদেশের আল-কায়দার শাখা বলে নিজেদের দাবি করে। সেই সূত্র ধরেই তারা হয়তো আফগানিস্তানে হিজরত করতে গিয়ে থাকতে পারেন। তবে এটা তাদের ভাষ্য, এ বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। অধিকতর তদন্তে বিষয়টি জানা যাবে।
জঙ্গিদের সায়েন্স প্রজেক্টে কতজন যুক্ত হয়েছে এবং তাদের হামলার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ছিল কি না, এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের পরিকল্পনা ছিল গ্যাস সিলিন্ডারের মাধ্যমে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানো। এই বিষয়টি তাদের পরিকল্পনা পর্যায়ে ছিল। এই সায়েন্স প্রজেক্ট বা গ্রুপের সদস্য এখন পর্যন্ত ১০ জন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই গ্রুপের মাধ্যমে তাদের নিজেদের মধ্যে অনেক গোপন আলাপ হতো।
মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় জঙ্গিদের আনাগোনা বেশি কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শহরতলী এলাকাগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে। এখানে খুব ঘনবসতি। আর এই সব জায়গাকেই জঙ্গিরা তাদের আস্তানা হিসেবে বেছে নেয়।
বসিলা এলাকায় সাবেক হেফাজতে ইসলাম নেতা মামুনুল হকের আধিপত্য ছিল। এই এলাকায় আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিদের সাথে মামুনুল হকের কোনো যোগাযোগ ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামুনুল হকের বিষয়ে আমাদের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে আপনাদের তথ্য জানিয়েছেন। মামুনুল হকের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্কের বিষয়ে কিছু কথাবার্তা উঠে এসেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করব।
এমএসি/এনএফ/জেএস