কর পরিদর্শক সাইফুলের তেলেসমাতি
২০০৭ সালে উচ্চমান সহকারী পদে আয়কর বিভাগে যোগদান করেন সাইফুল ইসলাম। বর্তমানে এক ধাপ পেরিয়ে তার পোস্ট কর পরিদর্শক। চাকরি জীবনে বড় ধরনের কিছু করে না দেখাতে পারলেও সম্পদ অর্জনের দিক দিয়ে তেলেসমাতি দেখিয়েছেন তিনি।
১৪-১৫তম গ্রেডের একজন কর্মচারী হয়েও ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে তিনটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন সাইফুল। শুধু তাই নয়, নিজ জেলা পাবনায় স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে বাড়ি, একরের পর একর জমি ও ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন তিনি। দুর্নীতি চাপা দিতে স্ত্রীকে বানিয়েছেন ব্যবসায়ী।
তবুও আড়াল করতে পারেননি অনিয়ম-দুর্নীতি। ধরা পড়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।
১৪-১৫তম গ্রেডের একজন কর্মচারী হয়েও ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে তিনটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন সাইফুল। শুধু তাই নয়, নিজ জেলা পাবনায় স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে বাড়ি, একরের পর একর জমি ও ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন তিনি
২০২২ সালে তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা অনুসন্ধান এবং পরবর্তী সময়ে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু হয়। এসব অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি। মাঝে কয়েকবার অনুসন্ধান কর্মকর্তা বদল হয়েছে। যদিও দুই বছরের অনুসন্ধান শেষে সাইফুলের অধিকাংশ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। শিগগিরই দুদক তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনুসন্ধান পর্যায়ে এনবিআর, শেয়ার বাজার, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন অফিস, ভূমি অফিস ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। যতটুকু যাচাই করা সম্ভব হয়েছে, তাতে সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়। ছোট একটি চাকরি করে ঢাকায় তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া অসম্ভব। এর বাইরে ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য রয়েছে। যদিও আমাদের অনুসন্ধান শেষ হয়নি। তবে, আপাতত মামলা করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ দুদকের হাতে রয়েছে।
নিজ জেলা পাবনা সদরের গোগাছি গ্রামে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন সাইফুল ইসলাম। ব্যাংকে তার অর্ধকোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। শ্বশুর আফজাল মাহমুদের নামেও বহু সম্পদ গড়েছেন। পাবনা জেলা সদরে একটি বহুতল বাড়ি ও কয়েক একর জমি ক্রয় করেছেন তিনি
কর পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বর্তমানে সিলেট অঞ্চলে কর্মরত রয়েছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। ঢাকা পোস্টের পরিচয় দিয়ে মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
কর কর্মকর্তা সাইফুলের যত সম্পদ
অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, নিজ জেলা পাবনা সদরের গোগাছি গ্রামে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন সাইফুল ইসলাম। ব্যাংকে তার অর্ধকোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। শ্বশুর আফজাল মাহমুদের নামেও বহু সম্পদ গড়েছেন। পাবনা জেলা সদরে একটি বহুতল বাড়ি ও কয়েক একর জমি ক্রয় করেছেন তিনি।
এছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে সাইফুল ইসলামের। দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে মোহাম্মদপুরে চন্দ্রিমা মডেল টাউন ব্লক-এ’তে (রোড নং-৮ ও বাড়ি নং-১৮) সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর নামে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া, ধানমন্ডি এলাকায় (৩/৪০ সুলতানগঞ্জে, পশ্চিম ধানমন্ডি) একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা থাকারও সত্যতা পাওয়া গেছে।
তার স্ত্রী আল্লিকা মাহমুদ একসময় বেসরকারি চাকরি করতেন, বর্তমানে গৃহিণী। অথচ সাইফুল ইসলাম তাকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। আল্লিকা মাহমুদ তার আয়কর ফাইলে গরু মোটাতাজাকরণ ও মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। বাস্তবে তাদের ওই ব্যবসা থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি
কর পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম রাজশাহী বিভাগের অধীন পাবনা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি ঢাকা বিভাগের ময়মনসিংহ জেলায় স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়ে চাকরি নিয়েছেন।
সর্বশেষ ঢাকার কর অঞ্চল-৫ এর সার্কেল-৮৯ এর কর পরিদর্শক হিসেবে সিলেটে বদলি হয়ে কর্মরত রয়েছেন সাইফুল ইসলাম। তার স্ত্রী আল্লিকা মাহমুদ একসময় বেসরকারি চাকরি করতেন, বর্তমানে গৃহিণী। অথচ সাইফুল ইসলাম তাকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। আল্লিকা মাহমুদ তার আয়কর ফাইলে গরু মোটাতাজাকরণ ও মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। বাস্তবে তাদের ওই ব্যবসা থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আরএম/কেএ