চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে নিজের শিশুকে বিক্রি : কমিশনের সুয়োমটো
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিনাজপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুর রশিদ। হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে নিজের মেয়েকে বিক্রির সংবাদে উষ্মা প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
গুলিবিদ্ধ বাবা আব্দুর রশিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা, তাদের বিক্রি করা বাচ্চার বিষয়ে তাদের অভিমত গ্রহণ, ভরণপোষণ যাচাই ও যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণসহ তাকে আর্থিকভাবে সহায়তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে দিনাজপুর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
আজ (সোমবার) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আহত বাবার হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে মেয়েকে বিক্রির সংবাদে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন
সুয়োমটোতে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ বাবার হাসপাতালের চিকিৎসার বিল পরিশোধের জন্য একটি শিশুকে ৩৭ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। দিনাজপুর সদর উপজেলার কাটাপাড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুর রশিদ ও রোকেয়া দম্পতি গত ১০ আগস্ট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া কন্যা শিশুকে গাইবান্ধার এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করা হয়।
গত ৪ আগস্ট আব্দুর রশিদ তার স্ত্রী রোকেয়াকে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে বিক্ষোভকারী, আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে এলাকাটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। তখন প্রাণ বাঁচানোর জন্য দৌড়ে নিরাপদ স্থান খোঁজার চেষ্টার সময় রশিদের তলপেটে একাধিক গুলি লাগে। প্রথমে তিনি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করলেও পরে গুলির কারণে ক্ষতগুলোর চারপাশে সংক্রমণ শুরু হলে গত ৮ আগস্ট তাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। পরের দিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পেট থেকে নয়টি গুলি বের করা হয়। তার পরের দিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম হলে আব্দুর রশিদ এবং তার স্ত্রী রোকেয়ার চিকিৎসা ব্যয় মেটানো অসম্ভব হয়ে যায়।
রোকেয়া জানান, আমরা যখন মেয়েকে বিক্রি করি তখন তারা ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিল। পরে আরও ১২ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।’
এদিকে ডাক্তার অক্টোবরের মধ্যে আব্দুর রশিদের আরও দুটি অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন। ততক্ষণ পর্যন্ত শরীর সচল রাখতে রশিদকে ইউরিনাল ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। রশিদের সাপ্তাহিক চিকিৎসায় প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়, যেখানে রোকেয়াকে প্রতি তিন দিন পরপর ইউরিনাল ব্যাগের জন্য এক হাজার টাকার ব্যবস্থা করতে হয়। আব্দুর রশিদ ও রোকেয়া দম্পত্তির আড়াই বছর বয়সী আরও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
এ বিষয়ে কমিশনের সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির সময় গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদের হাসপাতালের চিকিৎসার বিল পরিশোধের জন্য সদ্য ভূমিষ্ঠ তার নিজ কন্যা শিশুকে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। নাগরিকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ভুক্তভোগীদের চিকিৎসা সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা যায় যে, সরকারি হাসপাতালে বিনা অর্থ ব্যয়ে তাদের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেন এত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে তা কমিশনের নিকট বোধগম্য নয়।
জেইউ/এমএ