‘সার্টিফিকেট আছে’ বলে গাড়ি থামাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা!
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে। এমন সময় সড়কে ট্র্যাফিক পুলিশের সংকট দেখা যায়। পুলিশের অনুপস্থিতিতে বেশ কিছুদিন সড়কে শৃঙ্খলার হাল ধরেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের এ কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানান দেশের সাধারণ শ্রেণি ও পেশার মানুষ। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্মস্থলে পুলিশ ফিরতে শুরু করলে সড়ক ছেড়ে পড়ার টেবিলে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।
তবে, একদল শিক্ষার্থী এখনও ঢাকা শহরের কয়েকটি সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন। যাদের মাধ্যমে ভালো অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখেও পড়তে হচ্ছে গাড়িচালক থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীদের। এক্ষেত্রে নিজেদের ‘সার্টিফিকেট’ প্রসঙ্গ টেনে আনছেন তারা।
মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কিছুদিন পর সড়কে ট্র্যাফিক পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সরব হতে থাকলে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান দায়িত্বরতরা।
তাদের কথায়, ‘আমরা পারি, আমাদের সার্টিফিকেট আছে’
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সড়কে দায়িত্ব পালন করা সকল শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ট্র্যাফিক সনদ। যাতে এ সনদ ব্যবহার করে রিলেভেন্ট ফিল্ডে সহজে কাজ পেতে পারেন তারা। কিন্তু এ সনদের বড়াই দেখিয়ে ঘটছে ভিন্ন ঘটনা।
গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশান এলাকার বেশ কয়েকটি ট্র্যাফিক চেকপয়েন্টে ট্র্যাফিক পুলিশদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সড়কে যানবাহনের ওপর নজরদারি করতে দেখা যায় কিছু শিক্ষার্থীকে। সন্দেহ হলে যানবাহন থামিয়ে কাগজপত্র চেক করছিলেন তারা। বিষয়টি অনেকে ভালোভাবে নেননি। তাদের প্রশ্ন, নজরদারির উদ্দেশ্যে রাস্তায় চলন্ত গাড়ি থামানো কিংবা কাগজপত্রের বৈধতা যাচাইয়ের কোনো অনুমতি শিক্ষার্থীদের আছে কি না। উত্তরে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘সার্টিফিকেটধারী’ বলে দাবি করেন।
তাদের কথায়, ‘আমরা পারি, আমাদের সার্টিফিকেট আছে’।
এদিন সরেজমিনে চালকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায়ও জড়াতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। গাড়ির চালকদের থেকে পাওয়া অভিযোগ মতে, শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে শুরুতে একটা দাম্ভিক আচরণ দেখান। হাতে লাঠিসোঁটাও থাকে কখনও। এমনকি সেটি দিয়ে গাড়িতে আঘাতেরও অভিযোগ রয়েছে।
উত্তর বাড্ডা থেকে আসা প্রাইভেটকারের চালক নুরুদ্দিন ইসলাম বলেন, ‘আমি হাতিরঝিল হয়ে তেজগাঁওয়ের দিকে যাচ্ছিলাম। এমন সময় শান্তা টাওয়ারের সামনে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেখতে পাই। তারা আমার গাড়ির সামনে এসে লাঠি দেখিয়ে ইশারা করে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে তাদের সঙ্গে ট্র্যাফিক পুলিশ দেখে বিষয়টি বুঝতে পারি। তারা আমাকে ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে না দিয়ে আগে নিজেরা এসে চেঁচাতে থাকে। পরে ডিউটিতে থাকা সার্জেন্টকে কাগজপত্র দেখিয়ে চলে আসি।’
রামপুরা থেকে আসা এক মোটরসাইকেলের আরোহীকেও থামান শিক্ষার্থীরা। তার মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত হেডলাইট লাগানো থাকায় সেটি খুলে রাখার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত হেডলাইট যোগ করা বেআইনি। একপর্যায়ে এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা হলে বিষয়টি সমাধান করেন কর্তব্যরত এক সার্জেন্ট।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে সেই ট্র্যাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘আসলে শিক্ষার্থীরা আমাদের সাহায্য করতেই কাজ করছেন। তাদের অনুমতিও রয়েছে আমাদের সঙ্গে থাকার। অনুমতিগুলো এসেছে প্রশাসন থেকেই। এ ছাড়া তাদের ট্র্যাফিক কন্ট্রোল ট্রেনিংয়ের ওপর সার্টিফিকেট রয়েছে।’
কিন্তু এই সার্টিফিকেট আছে বলে তারা (শিক্ষার্থীরা) রাস্তায় নেমে গাড়ির থামিয়ে কিংবা কাগজপত্র যাচাই করে চালকদের বাড়তি হেনস্তার মধ্যে ফেলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
এ বিষয়ে গুলশান ট্র্যাফিক জোনের এডিসি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা গাড়ির কাগজ যাচাই করছে কি না, সেটি আগে নিশ্চিত হতে হবে। সেখানে যেহেতু পুলিশ কর্মকর্তারা রয়েছেন, তারাই মূলত কাগজপত্র যাচাইয়ের কাজ করছেন। তবে, গাড়ি থামিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আমি মনে করি, চালকদের সঙ্গে এটি করা অবশ্যই অনুচিত। সার্টিফিকেট থাকলেও কোনোক্রমে গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স বা যেকোনো কাগজ যাচাই করার অনুমতি শিক্ষার্থীদের নেই।
এমএআর/