দুই ঘণ্টার কর্মবিরতিতে ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট

নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তারা নতুন মহাপরিচালকের মাধ্যমে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হলে এ ইনস্টিটিউটের প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহণযোগ্যতা হারাবে বলে দাবি করেছেন।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের প্রতিবাদে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।
কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সামরিক কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাবের প্রতিবাদে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন।
প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা জানান, গত ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে পদায়নের প্রস্তাব করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। যা এ ধরনের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ এবং গবেষণার গ্রহণযোগ্যতার পরিপন্থি। এ প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এ পদায়নের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
আরও পড়ুন
তারা আরও জানান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুক্ত বিজ্ঞান চর্চায় ওশানোগ্রাফি বিষয়ের মতো একটি জটিল ও নিবিড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই ইনস্টিটিউটের প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। বিশ্বের অন্য উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, এ ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান একাডেমিশিয়ান অথবা বিজ্ঞানীর দ্বারা পরিচালিত হয়। বিশ্বে মহাকাশ গবেষণার পর সমুদ্র গবেষণাকেই জটিল ও নিবিড় গবেষণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন এ প্রতিষ্ঠানটির মুক্তভাবে গবেষণার অধিকতর সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, চীন, রাশিয়া এমনকি ভারতে দেখা যায়, এই ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান একাডেমিশিয়ান বা বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত হয়, সামরিক বাহিনীর দ্বারা নয়। সামরিক বাহিনীর আওতায় পরিচালিত গবেষণা চাপিয়ে দেওয়া গবেষণা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এসব গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় না।
কর্মকর্তারা জানান, নবসৃষ্টি বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা ফলাফলগুলো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হচ্ছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের দাবি খুবই স্পষ্ট। সমুদ্র বিষয়ক স্বনামধন্য যেকোনো বিজ্ঞানী, একাডেমিশিয়ান বা সিভিল ব্যক্তিত্বকে এ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হোক। এটি কোনো ব্যক্তি স্বার্থের দাবি নয় বরং একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা বজায় রেখে মুক্ত গবেষণার সহায়ক হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রক্ষার দাবি। এই দাবিটি সরকারের গুণগত সংস্কার কার্যক্রমের সহায়ক। আমাদের আরও দাবি থাকবে, সরকার যেকোনো পরিবর্তনই করুক না কেন, এই পরিবর্তন যেন প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং এতে যেন প্রতিষ্ঠানের গুণগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
এসআর/এসএসএইচ