‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনে কনটেন্ট ক্রিয়েটর শামস-সুমন-সম্পদ

‘মা, এই চেইনটা পরি?’ মেয়ের কথায় আঁতকে ওঠেন মা। কোনো একটা অনুষ্ঠানে যাবেন দুজন। তৈরি হওয়ার সময় মেয়ের আবদার সোনার চেইন পরবে। মা বলেন, ‘পাগল হয়েছিস? দিনকাল ভালো না। এ সময় কেউ সোনার চেইন পরে বের হয়?’ মেয়ে মানতে চায় না। বুঝতে পারে না সামান্য সোনার চেইন পরলে কী সমস্যা।
অনেক বাগবিতণ্ডার পর তারা বের হয়। রিকশা না পেয়ে হাঁটতে থাকেন দুজন। মা বকতে থাকেন, ‘গলাটা ঢেকে রাখো, চেইন দেখা যাচ্ছে।’ মেয়ে রাজি হয় না। একপর্যায়ে ছিনতাইকারী এসে মেয়ের সোনার চেইন নিয়ে যায়। মাঝরাস্তায় আর্তনাদ করে ওঠেন মা। যেকোনো নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটা সোনার চেইন হারানো সামান্য ঘটনা নয়। এর সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন যেমন জড়িয়ে থাকে, তেমনি এটি দুর্যোগের দিনে তাদের সম্বলও।
সম্প্রতি বাংলাদেশের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর শামস আফরোজ চৌধুরী ‘দিনে রাতে নির্ভয়ে চলা’র অধিকারকে এভাবেই তুলে ধরলেন। ফেসবুকে তার ‘থটস অব শামস’ পেজে ৩১ লাখ ফলোয়ার আছে। এসব ফলোয়াররা বিভিন্ন ইস্যুতে বানানো শামসের কনটেন্ট দেখতে পছন্দ করেন।
শামসের কনটেন্টগুলোয় সাধারণত মা, বাবার মতো চরিত্রগুলো থাকে। ফলে যে ইস্যুগুলো তিনি তুলে ধরেন তা আরও গভীরভাবে ফুটে ওঠে। এদিন পোস্ট করা ভিডিওর শিরোনাম ‘হায় হায় এটা কি হলো!’ তিন মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওটির শেষ দিকে তিনি একটি বার্তাও দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
শামসকে বলতে দেখা যায়, ‘এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই আপনাদের অনেকেই পড়েছেন। আমরা কিন্তু সবাই দিনে রাতে নিরাপদে চলতে চাই। নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে। আমাদের দাবি-দাওয়া আমাদেরই বলতে হবে। কারণ বললেই বদলায়।’
শামস তার এই দাবির কথা তুলেছেন ‘আমিও জিততে চাই’ ওয়েবসাইটে। ইউএসএইডের সহায়তায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এই ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা নিরাপত্তার এই দাবি পৌঁছে যাবে রাজনৈতিক দল ও নীতি-নির্ধারকদের কাছে। তিনি তার ফলোয়ারদের ওয়েবসাইটটিতে তাদের দাবি তুলে ধরার আহ্বান জানান।
শামসের মতোই আরেকজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালাহউদ্দিন সুমন। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভ্রমণ নিয়ে চমৎকার সব ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করেন সুমন। ঘুরতে ভীষণ ভালোবাসেন। ফুরসৎ পেলেই বেরিয়ে পড়েন অজানা-অদেখা নানা বিষয়ের সন্ধানে। ফেসবুকে প্রায় ২৫ লাখ ফলোয়ার রয়েছে তার।
‘পর্যটন স্পট তো নয়, যেন পকেট কাটার ফাঁদ’ শিরোনামে করা দুই মিনিট ৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে সুমন বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলো পকেট কাটার ফাঁদ হয়ে উঠেছে। নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা বা থাইল্যান্ডের চেয়ে কক্সবাজার বা বান্দরবানে হোটেল ভাড়া বেশি গুণতে হয়। খাবারের দামও কয়েক গুণ বেশি। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য দেশে ভ্রমণ করা কঠিন হয়ে উঠেছে। খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে পাশের দেশগুলোতে ভ্রমণে যাচ্ছেন। এতে ক্ষতি হচ্ছে দেশের। তিনি দেশব্যাপী পর্যটন স্পটগুলোয় গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট ভাঙার দাবি জানান।
সুমন বলেন, ‘আমিও জিততে চাই। আপনি আমি জিতলে জিতবে জনতা। আর জনতা জেতা মানেই দেশ জেতা।’
তিনি ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ফলোয়ারদের আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
এমন আহ্বান জানিয়েছেন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর আলতাফ উদ্দিন আকরোমি সম্পদও। টিকটক দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তিনি। সম্পদ মূলত কর্মস্থল নিয়েই বেশি ভিডিও বানান। তার রিলসগুলোয় কর্মস্থলের অনেক সমস্যা উঠে আসে।
‘বস যখন এমন হয়— না বলে কি আর উপায় আছে?’ শিরোনামের কনটেন্টে তিনি এমন এক কর্মপরিবেশ তুলে ধরেছেন যেখানে ইনটার্নের নামে তরুণ কর্মীদের শোষণ করা হয়। এতে দেখা যায় তরুণ কর্মী পেইড ইনটার্নশিপ খুঁজছেন। কিন্তু তার নিয়োগ আগের মতোই ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। অথবা ছুটির ঘণ্টা বাজলেও বাসায় যেতে পারছে না কর্মী। বস তাকে আটকে রাখছেন। কিন্তু তার অতিরিক্ত শ্রম ওভারটাইম হিসেবে গণ্য হচ্ছে না। কেউ দিনের পর দিন ইনক্রিমেন্টের জন্য ঘুরছেন। তাকে ‘এমডি স্যার বিদেশে, এলেই সাইন হয়ে যাবে’ বলা হচ্ছে। কেউ কাজে গিয়েও কনভেন্স বিল পাচ্ছেন না, কারো মিলছে না বকেয়া ছুটির টাকা। কেউ কেউ তো চাকরি ছেড়ে দিলে খালি হাতেই ফিরছেন।
সম্পদের এই ভিডিও বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মপরিবেশ তুলে ধরে। যেখানে যথাযথ কর্মঘণ্টা, কাজের মূল্যায়ন এমনকি অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়টি মেনে চলা হয় না।
তবে শুধু সম্পদ নয়, শামস এমনকি সালাহউদ্দিন সুমনও এসব বৈষম্যের প্রতিকার চান। ‘আমিও জিততে চাই’ প্লাটফর্মে তারা তাদের দাবি তুলে ধরেছেন। এই তিনজনসহ আমিও জিততে চাই ক্যাম্পেইনে যুক্ত হয়েছেন আরও ১২ জন কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তাদের মধ্যে রয়েছেন ফুড ভ্লগার রায়হানিজম, সংগীত শিল্পী লুৎফর হাসান, কিটো ভাইসহ আরও অনেকেই। তারা নাগরিক দাবি তুলে ধরার প্লাটফর্ম ‘আমিও জিততে চাই’-এ যুক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি প্রকাশের পথকে অনুপ্রাণিত করছেন।
‘আমিও জিততে চাই’ ওয়েবসাইটে ভিডিও এবং আলোকচিত্র আপলোড করার মাধ্যমে, এমনকি লিখেও দাবি প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। এবার আপনাদের পালা। এতে আপনিও অংশ নিতে পারেন, সেরা পোস্টের জন্য আয়োজকরা দেবেন ৯ জনকে পুরস্কার।
এমএ