প্রস্তাবনায় ভবনের আকার-উচ্চতা বাড়ানো ছাড়া অন্য কিছু আসেনি
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন, ড্যাপ সংশোধনে রাজউকের সংশোধনীতে ভবনের আকার-উচ্চতার বাড়ানোর প্রস্তাবনা ছাড়া অন্য কিছু আসেনি। বন্যা প্রবাহ এলাকা, জলাভূমি, কৃষিজমি রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পর্যালোচনা বিষয়ক অনলাইন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভার প্রতিপাদ্য ছিল ‘কোন স্বার্থে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) বারংবার সংশোধনের উদ্যোগ: আইপিডির পর্যবেক্ষণ’।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আমরা বলে এসেছিলাম, আবাসন ব্যবসায়ী ও কিছু সংখ্যক পেশাজীবী ড্যাপ বাতিল বা স্থগিতের আবেদন করছে শুধু ভবন নির্মাণে বেশি এফএআর (ফার) মান বাড়ানোর জন্যই। আমাদের সেই শঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ড্যাপ সংশোধনে প্রস্তাবিত এরিয়া ফার ও ব্লকভিত্তিক ফার মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাসযোগ্য শহর নির্মাণে পরিকল্পনার ব্যাকরণ অনুসরণ করা হয়নি। ফলে ড্যাপে প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতাকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।
আরও পড়ুন
অনুষ্ঠানে আইপিডির অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, একটি বসবাসযোগ্য শহরে শুধু আবাসন নয়; পরিবেশ, প্রতিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণপরিবহন ইত্যাদি বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়ার কথা। অথচ আমাদের ব্যবসায়ী মহল কেবল ড্যাপ বাতিল এবং ফার বৃদ্ধির কথাই বলছে। এমনকি ফার বৃদ্ধি করা হলে ভবিষ্যতে ওই এলাকা বসবাসযোগ্য থাকবে কি না তা নিয়ে কোনো গবেষণা করা হয়নি। রাজউকের নীতিনির্ধারক মহলের অনেকেই নগর পরিকল্পনার গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারায় স্বার্থান্বেষী মহলের অন্যায় আবদারের কাছে নতি স্বীকার করছেন। গোষ্ঠীস্বার্থ চিন্তা না করে ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়াতে জনস্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
পরিকল্পনাবিদ রাকিবুল রনি বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীদের স্বার্থের সংঘাতের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ড্যাপ পুনর্মূল্যায়ন কমিটিতে রিহাবের সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি বৈষম্যবিরোধী চেতনার প্রতিফলন ঘটায় না। আমাদের স্থপতিদের খেয়াল রাখা দরকার তারা যেন তাদের পেশাগত নৈতিকতা এবং জনস্বার্থের প্রতি দায়বদ্ধতা মাথায় রেখে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট মতামত দেন, ব্যবসায়িক স্বার্থকে যেন অগ্রাধিকার না দেওয়া হয়।
স্থপতি আমিনুল ইসলাম ইমন বলেন, স্থপতিরা কেবল ফার বাড়ানোর কথা বলেননি, সঙ্গে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার অন্য বিষয়েও মতামত দিয়েছেন। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয় বিধায় ঢাকায় আগত মানুষদের বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠীর কথাও খেয়াল রাখতে হবে আমাদের।
পরিবেশকর্মী আমিরুল রাজিব বলেন, ড্যাপ নিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবীদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের দায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও বর্তায়। দেশের প্রতিটি শহর ঢাকাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। ফলে ড্যাপ এর যেকোনো সিদ্ধান্ত সুবিবেচনাপ্রসূত হতে হবে। রিহাবের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। নাগরিক অধিকারের স্থান থেকে শহরের নাগরিক সুবিধাদি বাড়াতে সরকারি সংস্থাগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। কেবল মানুষ নয়, প্রতিটা প্রাণী ও কীটপতঙ্গের কথাও বিবেচনা করে শহরের পরিকল্পনা করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, একটি শহরের ধারণ ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করেই পরিকল্পনার সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের কেবল মুনাফা লাভের চিন্তা শহরের উন্নয়নের অন্তরায়।
এএসএস/এসএসএইচ