প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেছেন, সোমবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তার সফরের মাধ্যমে চলমান অস্থিরতার নিরসন হবে এমনটা আশা করছি। আমরা চাইব ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও ভালো জায়গায় যাক। যাতে দুদেশের মানুষই তার সুফল ভোগ করেন। একইসঙ্গে চাচ্ছি ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা ন্যায্যতা, সমতা ও মর্যাদাপূর্ণ হবে। সেটা আমাদের ফোকাস থাকবে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন
সোমবারে বাংলাদেশে সফরে আসা ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্র প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন বলে জানান উপ-প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
আরও পড়ুন
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফরে চলমান উত্তেজনা নিসরন হবে কিনা— এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, আমরা আশা করছি ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা ভালো হবে। তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে সরকারে অগ্রাধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী। তার সঙ্গে আমাদের ভাষাগত, ইতিহাস ও সংস্কৃতিগত যোগাযোগ রয়েছে। অভিন্ন অনেক নদী রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার বিষয় রয়েছে, প্রত্যেকটা বিষয়ে আলোচনা হবে। প্রত্যেকটা বিষয়ই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের সঙ্গে করা ‘অসম’চুক্তির বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা হবে কিনা এমন প্রশ্নে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ভারতের সঙ্গে আগামীতে কি ধরনের সম্পর্ক হবে তা ভবিষ্যৎ বলতে পারে। তবে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ছাড়া অসম চুক্তিগুলো রয়েছে তা নিয়ে ভবিষ্যতে অবশ্যই আলোচনা হবে। এটা সামনে বুঝা যাবে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার না করে তাদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, আমরা তাদের বলতে পারি আপনারা আসেন। এসে মাঠে থেকে রিপোর্ট করে যান। ঘটনাস্থলে না এসে কারও মুখের কথায় প্রতিবেদনে সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায় না। সে জন্য আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কারণ আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। বিশ্বাস করি যে তারা এখানে এলে ভারতের টিভি ও গণমাধ্যমে যে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে তা অনেকাংশে দূরীভূত হবে।
রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মেটার প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছেন। এতে ভারতীয় গণমাধ্যমের অপতথ্য প্রচার নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে— অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সব অপতথ্যের বিষয়ে মেটার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। যাতে এটাকে ট্যাকেল (নিয়ন্ত্রণ) করা যায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন করেছে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে আসছে।
খোলা বাজারে সয়াবিন তেল না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তারা পুরোপুরি জানাবে। কিন্তু আমরা মনে করছি বাজারে সয়াবিন তেলের কোনো সংকট নেই। যথেষ্ট সয়াবিন তেল আছে। সামনের রমজানের সরবরাহের সংকট না হয় সে জন্য সরকার এলসি সহজ করেছে, আন্তর্জাতিক বাজারদর মনিটরিং করছি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আছে রোজার সময় মানুষ সয়াবিন ও পাম অয়েল সাশ্রয়ী মূল্যে পান।
শেখ হাসিনাকে ফেরাতে সরকার মৌখিকভাবে এখনো কেন ভারতকে বলছে না— এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনে সমর্পণ করতে চায়। তার আমলে গণহত্যা হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যার মূল নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা। তার আমলে গুম হয়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকা পাচার হয়েছে। পুরো বিষয়ে জবাবদিহিতার জন্য শেখ হাসিনাকে আইনের আওতায় আনা সরকারের কমিটমেন্ট। এটা করবো।
ভারতের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, এ চুক্তির কিছু আইনি দিক আছে। সেগুলো পূরণ করে একজন ফেরত চাইতে পারেন। সে প্রসিডিউরগুলো সরকার পূরণ করছে। তা পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে ফেরত চাইব।
প্রেস সেক্রেটারি জানান, ফেসবুক দেখছে বাংলাদেশকে ঘিরে কি অপতথ্য প্রচার হচ্ছে। মেটার হয়ে এখানে তৃতীয় পক্ষ কাজ করেন। ফেক নিউজ, অপতথ্য, ভুল তথ্য যারা ডিটেক্ট করেন তারা মেটাকে অ্যালার্ট করবেন। অবশ্যই মেটা তা দেখবে। কারণ এখানে তাদের ব্যবসা আছে। আমরা চাচ্ছি যেগুলো মিথ্যা, অপতথ্য সেগুলো যেন রিমুভ করা হয়।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পেজে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোর বিষয়ে সরকার শক্ত অবস্থানে যাবে কিনা— এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, এখানে মেটার হয়ে তৃতীয়পক্ষ তদন্ত করে। তারা দেখছে কোথা থেকে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। অনেক সময় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের নজরে আনা হলে, তারা রাষ্ট্রকে সংশয়ের চোখে দেখে। আগের সরকার ভালো ইউটিউবার, ফেসবুকে ভালো মন্তব্যকারী, যাদের ফলোয়ার রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও অ্যাকশনে যেত, পেজ রিমুভের চেষ্টা করত। মেটার কাছে ট্রাস্টের বিষয় আছে। তাই আমরা চাইব ফেক নিউজ তারা রিমুভ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
এনএম/এমএসএ