ইউপি চেয়ারম্যান ইস্যুতে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চায় সরকার
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের অপসারণের বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠলেও ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় হাজারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেসব ইউপিতে দাপ্তরিক কাজে কার্যত স্থবিরতা চলছে। নতুন করে সবাইকে অপসারণ করলে নাগরিক সেবায় আরও বেশি স্থবিরতা দেখা দেবে। তা ছাড়া ঢালাওভাবে অপসারণের পক্ষে নন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার ইউপি চেয়ারম্যান পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদের মধ্যে কেউ-কেউ বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সেসব ইউপিতে সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হলেও কাজের গতি ফেরেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চেয়ারম্যানদের একটা বড় অংশ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেখানে সবাইকে অপসারণ করা হলে সেবা পেতে নাগরিকদের অনেক বেশি ভোগান্তি পোহাতে হবে। সেজন্যই ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে চায় বর্তমান সরকার।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিনদিন পর শপথ গ্রহণ করা অন্তর্বর্তী সরকার সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। বরখাস্ত করা হয়েছে পৌর মেয়রদেরও। বাকি শুধু ইউপি চেয়ারম্যানরা।
বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নানা মহল থেকে তাদেরকে অপসারণ করার দাবি জানানো হয়েছে। বিএনপি মনে করে, প্রহসনের মাধ্যমে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদকে পতিত সরকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইউনিয়ন পরিষদ বহাল রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। সেগুলোতে জন্মসনদ, মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ নানা জরুরি কাজ হয়। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দিলে বা চেয়ারম্যানদের অপসারণ করলে এসব সেবায় স্থবিরতা দেখা দেবে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় দেড় হাজারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন না। কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। সেসব ইউপিতে ইউএনও বা অন্য কাউকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হলেও দাপ্তরিক কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নতুন করে সবাইকে অপসারণ করলে এ স্থবিরতা আরও বাড়বে। সেজন্য এ বিষয়ে ভেবে-চিন্তে পরিকল্পনামাফিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের এ কর্মকর্তা আরও জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যানদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া যাবে। আর প্যানেল চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) এই দায়িত্ব দেওয়া যাবে। বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসকেরা এই দায়িত্ব দিতে পারবেন।
আরও পড়ুন
গত ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত পরিপত্রে বলা হয়, অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের কাজ পরিচালনা এবং জনসেবা অব্যাহত রাখার জন্য স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন। প্যানেল চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অথবা যে কোনো জটিলতা পরিলক্ষিত হলে আইন প্রয়োগ করে বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে তার অধীন কর্মকর্তা, যেমন- উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সচল রেখে জনসেবা অব্যাহত রাখবেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (ইউনিয়ন পরিষদ অধিশাখা) মোহাম্মদ ফজলে আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেসব ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নেই সেসব জায়গায় ডিসিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারা সে অনুযায়ী কাজ করছেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদও ঢালাওভাবে অপসারণের পক্ষে নন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপরাধ না করলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে ঢালাওভাবে কেন অপসারণ করা হবে? যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করুন। কিন্তু একসঙ্গে সবাইকে অপসারণ করা ঠিক হবে না। অপরিকল্পিতভাবে সবাইকে অপসারণ করলে নাগরিকসেবায় বাড়বে ভোগান্তি।
এসএইচআর/এমজে