বন্দি নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি-চাকরি পুনর্বহালের দাবি

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেলে বন্দি নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের দ্রুত মুক্তি এবং চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলনে করা নির্যাতিত বিডিআর পরিবার ও বিডিআর কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে এমন দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে পূর্বের রায় বহাল রেখে পুনরায় তদন্তের ঘটনার নিন্দাও জানিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দুটি সুশৃঙ্খল বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। একইসঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে খুনি হাসিনার অবৈধ ক্ষমতাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সুসংহত করার উদ্দেশ্য ছিল দেশি বিদেশি চক্রান্তের নীল নকশার সফল বাস্তবায়ন। কিন্তু খুনি হাসিনা এই হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে বিডিআর বিদ্রোহ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে তদন্তের নামে তদন্ত হেফাজতে ৪৭ জন নিরীহ বিডিআর জওয়ানকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যে সমস্ত বিডিআর জওয়ান প্রকৃত সত্য প্রকাশ করতে যাচ্ছিল তাদেরই তদন্তের নামে মেরে ফেলা হয় এবং এই খুনি হাসিনার হাত থেকে পিলখানার পেশ ইমামও রক্ষা পাননি।
তারা বলেন, খুনি হাসিনার পদলেহনকারী তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ অত্যন্ত চতুরতা সঙ্গে সত্য প্রকাশ করে দিতে পারে এবং মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে না চাওয়া ৮৫০ জন জওয়ানকে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে জেলে পাঠিয়েছে। এই প্রহসন মূলক বিচারের দ্বিতীয় পর্ব মানে বিচার পূর্ব অভিনীত হয় পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল দায়রা জজ মোহাম্মদ জহুরুল হক ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের মাধ্যমে। এই প্রহসনমূলক বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৫২ জন নিরীহ বিডিআর জওয়ানকে ফাঁসি এবং ১৮২ জনকে যাবজ্জীবন ও প্রায় ৩০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেওয়া হয়েছে। অথচ একটি সাজার পেছনেও সরকার পক্ষ থেকে কোনো প্রকার যৌক্তিকভাবে সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।
বিডিআর পরিবারের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিচার কার্যক্রমের নাটক সুচারুভাবে সম্পন্ন করার পুরস্কার হিসেবে পিপি অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে টেকনোক্র্যাট কোটায় আইনমন্ত্রী আর সরকারি পিপি মোশারফ হোসেন কাজলকে দুদকের পিপি, দায়রা জজ মোহাম্মদ জহিরুল হককে দুদকের কমিশনার এবং দায়রা জজ ড. আক্তারুজ্জামানকে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, খুনি হাসিনা সরকারের পাতানো রায় বহাল রেখে নতুন তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নতুন পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন তদন্ত কমিশনের ওপর হাসিনার প্রেতাত্মার ছায়া পড়েছে। আমরা দেখেছি, শহীদ পরিবার এবং ক্ষতিগস্ত বিডিআর পরিবারের গণদাবির মুখে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারী, পরিকল্পনাকারী ও প্রকৃত খুনিকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনে ওৎ পেতে থাকা হাসিনার কর্মকর্তারা প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।
এসময় তিনি ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে —
১. খুনি হাসিনার প্রহসনমূলক রায় বাতিল বা স্থগিত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলবন্দি সব বিডিআর জওয়ানকে মুক্তি দিয়ে তদন্ত কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত পরিকল্পনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২. পূর্বের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে তদন্ত কমিশনের প্রজ্ঞাপন থেকে ‘ব্যতীত’ নামক শব্দটি ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠার ‘ঙ নম্বর’ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. খুনি হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে যে ১৮ হাজার ৫১৯ জন বিডিআর জওয়ানদের অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে তাদের সম্পূর্ণ সরকারি সুযোগ-সুবিধা সহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
৪. স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতিকে সুপ্রিম কোর্টের এপিলেড ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা এবং কমিশনের অন্যান্য সদস্যদেরকে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা দিতে হবে। এছাড়া কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের নিরাপত্তায় গাড়ি এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে।
একইসঙ্গে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় পূর্বের বিচারের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে এসে প্রকৃত মাস্টারমাইন্ড, রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানান তিনি।
আরএইচটি/এসএম