বিজয় সরণিতে রোববার সফল, পুলিশের দুশ্চিন্তা ‘উড়োজাহাজ ক্রসিং’

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত ও বড় ট্রাফিক সিগন্যাল এলাকা বিজয় সরণি। সেখানে ট্রাফিক শৃঙ্খলায় যানবাহনের চাপ সামলাতে ও যানজট কমাতে নতুন নিময় চালু করেছে পুলিশ। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) শুরু হওয়া নতুন নিয়মের দ্বিতীয় দিন রোববার (২৬ জানুয়ারি) সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় সকাল থেকে এ এলাকার সড়কের চিত্রটা ছিল গতকালের চেয়ে ভিন্ন। তবে সকালটা ভালোভাবেই সামলানো গেছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যরা।
সরেজমিন দেখা যায়, নতুন নিয়ম বাস্তবায়নে সকাল থেকে বিজয় সরণি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি ও কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। বিজয় সরণি সিগন্যাল পার হওয়া অফিসগামী যানবাহনের চাপ বেশি থাকলেও তা সামলে নিয়েছে পুলিশ। তবে হিমশিম পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে উড়োজাহাজ সিগন্যালের কারণে। কারণ সেখানে সবচেয়ে বেশি চাপ সামলাতে হচ্ছে সকালে। বিজয় সরণিতে বেশিক্ষণ সময় সিগন্যাল চালু থাকায় এর প্রভাব চলে যাচ্ছে উড়োজাহাজ ক্রসিংয়ে। সেখানে আবার রাস্তা ক্লিয়ার না থাকায় আগারগাঁও রুটের সিগন্যাল বন্ধ রাখায় জট লেগে যাচ্ছে বিআইসিসি-আগারগাঁও মোড় পর্যন্ত।
মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক সদস্যরা বলছেন, উড়োজাহাজ ক্রসিং হয়ে আসা যানবাহনের চাপ সামলানো এখন বড় দুশ্চিন্তার। বিকল্প সড়ক না থাকায় সে চাপ সামলানোর বিকল্প সমাধান না পেয়ে সিগন্যাল ছাড়া পর্যন্ত অপেক্ষায় আটকে রাখতে হচ্ছে। যা একদিকে জট সৃষ্টি করছে সড়কে।
আরও পড়ুন

গত ২৩ জানুয়ারি যানবাহন চলাচল সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। যা শনিবার থেকে শুরু হয়েছে।
রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, প্রচুর সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি বিজয় সরণি মোড়ে। প্রত্যেক লেনেই ট্রাফিক সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। বিজয় সরণির মাঝখানে দাঁড়িয়ে কাজী সোহেল নামে ট্রাফিক সার্জেন্ট সিগন্যাল কমান্ড দিচ্ছেন। জাহাঙ্গার গেট থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলোতে চলমান অবস্থায় রাইট (ডান) টার্ন না করে, ‘এখানে না, এখানে ইউটার্ন বন্ধ, সামনে থেকে (ফার্মগেট) হয়ে ইউটার্ন করে আসুন’ মাইকিং করেও জানান দিচ্ছেন ট্রাফিক সদস্যরা। যদিও অনেক চলন্ত যান এসে বিজয় সরণি মোড়ে লাগানো রশির কাছে থেমে যাচ্ছে। তবে ট্রাফিক শৃঙ্খলার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বুঝিয়ে তাদের ঘুরে আসতে বলতে দেখা যায়।
বেশি চাপ উড়োজাহাজ ক্রসিং লেনে
সরেজমিনে দেখা যায়, ফার্মগেট ছেড়ে আসা যানবাহন, সোজা, বামে ও ডানে যেতে পারছে, তবে জাহাঙ্গীর গেট থেকে ইনকামিং লেন যখন সিগন্যাল ছেড়ে দিচ্ছে তখন বিজয় সরণিতে এসে সোজা ও বামে ফ্লাইওভারের দিকে টার্ন করতে পারছে। তবে মাঝে ডানে উড়োজাহাজ ক্রসিংয়ের দিকে যাওয়ার পথ বন্ধ। অর্থাৎ রশি দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে ডানে চলাচল।

আবার তেজগাঁও ফ্লাইওভার থেকে নেমে আসা লেন ছাড়লে যানবাহন বামে, ডানে ও সোজা উড়োজাহাজ ক্রসিংয়ের দিক থেকে যেতে পারছে। মাঝে কখনো কখনো চাপ সামলাতে তেজগাঁও ফ্লাইওভার ছেড়ে আসা লেনের যানবাহন ও উড়োজাহাজ ক্রসিং ছেড়ে আসা লেনের যানবাহন একসঙ্গে ছেড়ে দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। তাতে সোজা চলা যানবাহন দ্রুতগতিতে যেতে পারলেও মাঝে আটকে থাকছে বামে ও ডানে যেতে ইচ্ছুক যানবাহন।
বিজয় সরণি মোড়ে উপস্থিত শেরেবাংলা নগর এলাকার ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার উদয় কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, যা আশঙ্কা করছিলাম তার চেয়ে ভালো অবস্থা। কারণ সকালে তো অফিসগামী ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগামী যানবাহনের প্রচুর প্রেসার একসঙ্গে সামলাতে হয়। এরমধ্যে নতুন নিয়ম যানবাহন চালকদের বোঝানোও তো তাৎক্ষণিক মুশকিল। সে তুলনামূলক আশঙ্কার চেয়ে ভালভাবে সামলানো গেছে সকালটা।

তিনি বলেন, উড়োজাহাজ ক্রসিং থেকে আসা যানবাহনের চাপ ছিল অত্যধিক। সেটার চাপ সামলানোর বিকল্প কিছু পাচ্ছি না। কারণ শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ দূরপাল্লার বাস ও ব্যক্তিগত পরিবহনের চাপ সামলাতে হচ্ছে বিজয় সরণিতে। অন্য সিগন্যাল যখন সচল করা হচ্ছে তখন বিজয় সরণি থেকে উড়োজাহাজ ক্রসিং পেরিয়ে বিআইসিসি-আগারগাঁও মোড় পর্যন্ত যানজট লেগে যাচ্ছে। এটা নিয়ে ঊর্ধ্বতন স্যারদের সঙ্গে কথা বলছি।
দায়িত্বরত সার্জেন্ট কাজী সোহেল বলেন, নিয়ন আয়ত্তে নিতে সময় লাগবে চালকদের। কারণ অনেকে নতুন নির্দেশনা মানতে চাইছেন না। না বুঝে না জেনেই টার্ন নিতে চাইছেন বিজয় সরণির ডানে। তাতে সড়কের গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কয়েকদিন গেলে আশা করি সবাই অভ্যস্ত হবেন। বিকল্প সড়কগুলো ব্যবহার করবেন। উড়োজাহাজ ক্রসিংটা সমস্যা করছে। বিশেষ করে সকালটা। এখানে যদি ডাইভার্ট করে বামে যেতে ইচ্ছুক অর্থাৎ জাহাঙ্গীর গেটের দিকে যেতে যানবাহনকে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়, অনেকাংশে সমাধান আসবে।
জেইউ/জেডএস