পুলিশের জনমুখী পিআর, মামলার হিসাব উন্মুক্ত রাখার সুপারিশ

জনমুখী পুলিশিং কার্যকরে পাবলিক রিলেশন (পিআর) স্ট্র্যাটেজি শক্তিশালী করার পাশাপাশি পুলিশের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে থানাভিত্তিক মামলা কার্যক্রমের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখার সুপারিশ পুলিশ সংস্কার কমিশন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সেই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে সরকার।
তাতে পুলিশের একটি আলাদা ও সুসংগঠিত পাবলিক রিলেশন (পিআর) স্ট্র্যাটেজি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশন বলছে, পিআর স্ট্র্যাটেজি পুলিশের সেবাগুলো সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক উন্নত করতে সহায়তা করবে। বর্তমান সময়ে অনেক নাগরিক, বিশেষ করে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, পুলিশের সেবাগুলো সম্পর্কে অবগত নয়, যা জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের সঠিক সহায়তা পেতে বাধা সৃষ্টি করে।
উদাহরণস্বরূপ, পুলিশের হটলাইন নম্বর বা বিশেষায়িত নারী সেবা ডেস্কের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও প্রচার প্রচারণা চালানো হলে নারী নির্যাতন বা হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা সহজেই সহায়তা চাইতে উৎসাহিত হবে।
মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পুলিশের সেবা ও কার্যক্রম প্রচার করা হলে জনগণের মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে এ স্ট্রাটেজি পুলিশ-জনগণ যোগাযোগকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে সহায়তা করবে। একটি শক্তিশালী পিআর স্ট্র্যাটেজি পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নত করার পাশাপাশি নাগরিক সেবাদান প্রক্রিয়া আরও জনমুখী করতে ভূমিকা রাখবে।
এক্ষেত্রে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
পুলিশের আলাদা পিআর (পাবলিক রিলেশন) স্ট্র্যাটেজি থাকতে হবে, যাতে পুলিশের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ আরও জোরদার হয়। যেমন– পুলিশের বিভিন্ন হটলাইনের ব্যাপারে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রমোশন করা যেতে পারে। বিশেষ করে নারীদের জন্য পুলিশের যে সেবাগুলো আছে তা আরও প্রচার-প্রচারণার দরকার আছে।
তথ্য আদান-প্রদানে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা বৃদ্ধি
বিক্ষোভ বা মব নিয়ন্ত্রণের জন্য অস্ত্র বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয়ের খরচের বিস্তারিত বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ এটি জনগণের সামনে পুলিশের খরচের যৌক্তিকতা এবং প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে সহায়তা করবে। অস্ত্র বা যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে জনগণের করের টাকা ব্যবহৃত হয়, তাই এ খরচের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা নাগরিকদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
একইভাবে প্রতিটি থানায় মামলা ও কোর্ট ওয়ারেন্টের পেন্ডিং স্ট্যাটাস, সমাধান হওয়া মামলার সংখ্যা এবং বিভিন্ন ধরনের মামলার তথ্য একটি পাবলিক ডেটাবেসে শেয়ার করা হলে পুলিশের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আসবে এবং এটি জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ তথ্য শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে জনগণ জানতে পারবে পুলিশের কার্যক্রমের অগ্রগতি, মামলার নিষ্পত্তির অবস্থা এবং পুলিশের ওপর আস্থা বাড়বে। পুলিশ বাহিনীর কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য জনগণের কাছে নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক তথ্য প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সামাজিক ন্যায়বিচারের পাশাপাশি পুলিশের প্রতি জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করবে।
সুপারিশ
পুলিশের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে থানাভিত্তিক মামলা কার্যক্রমের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত।
জেইউ/এসএসএইচ