কর্মক্ষেত্রে ‘অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি’ জোরদার করতে হবে

দেশের প্রতিটি অফিস বা কর্মক্ষেত্রে অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি থাকার আইন থাকলে তা অনেক প্রতিষ্ঠানে নেই বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, যেসব কর্মক্ষেত্রে অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি আছে, সেখানে এর প্রভাব সেভাবে লক্ষণীয় নয়। বিভিন্ন বাধা ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত। তাই কর্মক্ষেত্রে এই অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি জোরদার করতে হবে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমতায় তারুণ্য-ইয়ুথ ফর ইক্যুয়ালিটি প্রকল্পের অধীন ‘গণমাধ্যমে জেন্ডার-সংবেদনশীল ভাষা’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আলোচনা সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং অ্যাম্বাসি অব দ্য কিংডম অব নেদারল্যান্ডস, ঢাকা।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. সানজিদা আখতার বলেন, একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে যদি আমি দেখি তাহলে মনে হবে পত্রিকাতে অনেক নারীর ছবি দেখি, সফলতার চিত্র দেখি, কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই নির্যাতিত নারীর নাম পরিচয় গোপন রেখে সংবাদ প্রকাশিত হয় বা বিশ্লেষণ হয়। তাই অনেকের কাছে মনে হতে পারে যে সবকিছু ঠিক আছে, যথেষ্ট জেন্ডার সংবেদনশীল হয়েছে। কিন্তু যদি ভাষার বিষয়ে আসেন তাহলে বলব- ভাষা কিন্তু কেবল শব্দতে নয়। ভাষা হচ্ছে একটা সোশ্যাল কনস্ট্রাকশন।
তিনি আরও বলেন, কেবল মেন উইমেনের জায়গায় হিউম্যান দেব, চেয়ারম্যানের জায়গায় চেয়ারপারসন লিখবো বা পত্রিকায় বেশি নারীদের ছবি দিলাম তাতে আমরা বিরাট পরিবর্তন হয়ে গেলো কিংবা সংবেদনশীল হয়ে গেলাম, এভাবে হয় না। যদিও এটা প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু ভাষাকে যদি আমরা বুঝতে চাই, ভাষার মাধ্যমে চিত্রায়ণ দেখতে চাই তাহলে আসলে ভাষা বিষয়টা অনেক গভীর।
নারীদের সাইবার বুলিংয়ের শিকার নিয়ে তিনি বলেন, সাইবার বুলিং থেকে কোনো নারী বেঁচে আছেন এটা আমার মনে হয় না, এটা গভীর বেদনার কথা। সাইবার বুলিং কীরকম হচ্ছে এটা নিয়ে যত আলোচনা হয়, সাইবার বুলিং কীভাবে ঠেকানো যাবে তা আলোচনা খুব কম পাই। আমাদের প্রত্যেকটি কর্মক্ষেত্রে অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি থাকবে এটা আইন করে দেওয়া হয়েছে। তবে এটা শুনতে ভালো উদ্যোগ হলেও এটার ইমপ্লিকেশনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এটাকে জোরদার করতে হবে। এটা যাতে কার্যকর থাকে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পইেন অ্যান্ড কমিউনিকেশন নিশাত সুলতানা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বা সাংবাদিকতায় যেসব ভাষা ব্যবহার করা হয় সেগুলো আসলে বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় না। আমরাতো আসলে একেকটা সংস্কৃতিকে ধারণ করি। কাজেই সংবাদমাধ্যম যে আমি আলাদাভাবে লিখবো সেটাতো না। সেটাতো বিশ্বাসের জায়গা, আর এই বিশ্বাসতো একদিনে পরিবর্তন হবে না। তাই আমার মনে হচ্ছে পরিবর্তনটা আসলে সব ক্ষেত্রেই দরকার।
তিনি আরও বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম যারা আছেন অর্থাৎ তারুণ্য; এই তারুণ্যের শক্তির মাধ্যমেই আমরা সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছি। পরিবর্তন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু ডিজিটাল স্পেসে নারীরা যে হয়রানির শিকার হচ্ছে, সেখানে কোনো শক্ত প্রতিবাদ দেখি না। আমার মনে হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই জায়গাতে কাজ করা দরকার। ডিজিটাল স্পেসে নারীদের নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি।
অ্যাম্বাসি অব দ্য কিংডম অব নেদারল্যান্ড ঢাকার সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার- জেন্ডার অ্যান্ড সিভিল সোসাইটি মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও মনে হচ্ছে আমরা সেই ৭০-ই পড়ে আছি। এখনও তেমন আগাতে পারি নাই। যতটুকু এগিয়েছে এটা কিন্তু নিজের শক্তিতে এগিয়েছে। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র বা আইন কিন্তু আমাদের সেভাবে ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘসময় ধরে আমাদের দেশে নারী প্রধানমন্ত্রী ছিল। কয়েকজন পুরুষ রাষ্ট্রপতি ছাড়া। তারপরও কেন আমাদের দেশের নারীদের অবস্থান উঠে আসছে না? দেশের অর্ধেকের বেশি নারী। আমাদের পিছিয়ে রেখে কী পুরুষরা এগিয়ে যেতে পারবে? না। আমরা যদি হাত না মিলাই তাহলে দেশটাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব কী? তাই নারীদের অধিকারটাও দেয়া দরকার যে, নারীরাও মানুষ, তাদেরও অধিকার আছে। তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আখতার, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সহযোগী অধ্যাপক (অস্থায়ী) মনিরা শরমিন প্রমুখ।
এএইচআর/এমএ