সমঝোতার কারণে অনেক বড় দুর্নীতির অভিযোগই হয় না, ধামাচাপা হয়

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন বলেছেন, সমঝোতার মাধ্যমে ঘটে যাওয়া অনেক বড় দুর্নীতির অভিযোগই হয় না। ধামাচাপা দেওয়া হয়। যার সঙ্গে ঠিকাদার, দপ্তর প্রধান কিংবা সাংবাদিক হোক, তারা খবর দেন না। দুর্নীতির খবর যেন ধামাচাপা দেওয়া না হয়, না লুকানো হয়।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বৈঠক শেষে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ ও সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।
অনেক বড় দুর্নীতির অভিযোগই হয় না উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ছোট ছোট দুর্নীতির হলে আমরা আগে খবর পাই। কিন্তু সমঝোতার মাধ্যমে যে দুর্নীতি হয় অর্থাৎ বড় দুর্নীতি, সেটার অভিযোগই হয় না। সেটার সঙ্গে ঠিকাদার, দপ্তর প্রধান কিংবা সাংবাদিক হোক তারা খবর দেন না। আমাদের আবেদন থাকবে বড় দুর্নীতির নিউজ যেন বেশি বেশি সামনে আসে। দুর্নীতির খবর বেশি আসুক তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা যেন দুর্নীতির খবর ধামাচাপা না দেই, না লুকাই। জেলা প্রশাসকরা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, তারা এটা নিয়ে কাজ করবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেক জেলায় জেলায় কার্যালয় নেই। সেটা সত্যি। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির সম্মুখীন হই, সেটা কমাবো কীভাবে সেটাই বড় প্রশ্ন। আমাদের সামনে এ ধরনের সংকটের কথা এসেছে। প্রধান উপদেষ্টার গতকালের ভাষণের বড় একটা অংশ ছিল দুর্নীতি। আজকের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সবচেয়ে বড় বার্তা ছিল পেছনের দুর্নীতি দমনের চেয়ে, সামনে যেন দুর্নীতির না হয় আজকে সেই বার্তা দিয়েছি।
মোমেন বলেন, আমাদের লক্ষ্য বর্তমানের দুর্নীতি যেন বন্ধ করতে পারি, পুরাতনগুলোর তদন্ত ও বিচারকাজ স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারি। দুদক মূলত ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ সময় ব্যয় করে পুরাতন দুর্নীতি নিয়ে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, পুরাতন দুর্নীতি নিয়ে ২০ শতাংশ, বর্তমানের দুর্নীতি নিয়ে ৩০ শতাংশ এবং ভবিষ্যতের দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য ৫০ শতাংশ ব্যয় করা উচিত। আমরা এই নির্দেশনা গ্রহণ করেছি। ওই নির্দেশনা জেলা প্রশাসককেও দিয়েছি। কারণ জেলা প্রশাসক হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে প্রধান কর্মকর্তা। ঘটনা যেখানেই ঘটুক, জেলা প্রশাসককেই আগে জানতে চাওয়া হয়। আবার দুর্নীতির প্রসঙ্গ আসলে জেলা প্রশাসককেই জবাবদিহি করতে হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনলের দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদনের সঙ্গে দুদক একমত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত আমরা পরীক্ষা করি নাই। সিপিআই একটি ম্যাট্রিক্সের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশ করা হয়। ম্যাট্রিক্স নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু এটা ১৮০টি দেশ যেটা গ্রহণ করে। আমরা এর বাইরে থাকতে পারি না।
তিনি বলেন, দুদকের সঙ্গে বিরোধী মতের কোনো বিরোধ নেই। বিরোধ দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে। এমনকি আমি যদি দুর্নীতিবাজ হই, আমাদের সঙ্গেও বিরোধ থাকতে পারে। যাদের আইনের আওতায় আনা চূড়ান্ত লক্ষ্য। ভবিষ্যতে দুর্নীতি যেন প্রতিরোধ করতে পারি, আমাদের চেষ্টা থাকবে।
আরএম/জেডএস