বকেয়া পরিশোধের দাবি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে, শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এ সময় শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চিকিৎসক, সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর, শিশু মনোবিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞরা এবং প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের সভাপতি রোদেলা আমিন, সুশীল সমাজের নেতাদের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর (শিশু মনোবিজ্ঞানী) ড. ফায়েজা আহমেদ। তিনি তার বক্তব্যে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সূচনা থেকে বর্তমান অবস্থান এবং এর সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন। ২০০৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রফেসর ড. নায়লা জামান খানের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০০৯ সালে প্রথম ৫টি কেন্দ্রের মাধ্যমে শুরু হওয়া শিশু বিকাশ কেন্দ্র বর্তমানে ৩৫টি কেন্দ্রে উন্নীত হয়েছে। তিনি আরও জানান, শিশু বিকাশ কেন্দ্রগুলো ১০ টাকার বিনিময়ে একাধিক বিশেষায়িত সেবা প্রদান করছে এবং ২ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ জন রোগী ৮ লাখ ৮৬ হাজার ২৫২ বার চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।
এ সময়, তিনি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘যত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও, শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত ৮ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমনকি, মাতৃত্বকালীন ছুটি বা মৌলিক সুযোগ-সুবিধাও তারা পাচ্ছেন না।’
এছাড়া, শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের দুর্দশা নিয়ে কথা বলেন। জেলা পর্যায়ে কর্মরত শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ডা. মামুন উল্লেখ করেন, বেতন না পাওয়ার কারণে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সেবা চালিয়ে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। চাইল্ড সাইকোলজিস্ট দীপন চন্দ্র তাদের মানবেতর জীবনযাপন এবং মানসিক যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বেতন না পাওয়ার কারণে তারা শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’
ডেভেলপমেন্টাল থেরাপিস্ট শুকলা আবেগে ভেসে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের এই বেতনহীন অবস্থার পরিণতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন দ্রুত ব্যবস্থা।’ তিনি শিশু বিকাশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর কথা তুলে ধরে বলেন, ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্রের মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে এসব সেবা দেওয়া হচ্ছে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সরকারের সাহায্য ছাড়া এই সেবা বজায় রাখা সম্ভব নয়।’
চাইল্ড সাইকোলজিস্ট হাবিবুর রহমান সজীব সতর্ক করেন, নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষায়িত সেবা না পেলে ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধিতা বাড়বে এবং সরকারের সমাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের উপর চাপ বাড়বে। তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের জন্য শিশু বিকাশ কেন্দ্রের উন্নয়ন প্রয়োজন এবং রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তি জরুরি।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান, অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ থাকা একটি অমানবিক বিষয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপক স্বাস্থ্য সংস্কারের প্রয়োজন, তবে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের উন্নয়ন ও সংস্কারের পাশাপাশি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের বিষয়টি জরুরি।’
বিশেষ শিশুদের সুচিকিৎসায় শিশু বিকাশ কেন্দ্রের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রফেসর ডা. নায়লা জামান খানের স্মৃতিচারণ করেন এবং বলেন, ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র প্রান্তিক জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা যেন ভবিষ্যতে আরও কার্যকরীভাবে পরিচালিত হয়, সে জন্য সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
সংবাদ সম্মেলনের শেষে, উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রেস ক্লাবের সামনে একটি শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে তারা তাদের বকেয়া বেতন এবং রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জেডএস