জিপির চাকরিচ্যুতদের আন্দোলনে পুলিশের জলকামান, কয়েকজন আটক

মুনাফার ৫ শতাংশ বিলম্ব জরিমানাসহ ন্যায্য পাওনার দাবিতে জিপি হাউসের সামনে অবস্থান নেওয়া গ্রামীণফোনের চাকরিচ্যুত কর্মীদের সরাতে জলকামান নিক্ষেপ ও মৃদু লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিদের সরাতে কার্যক্রম শুরু করেন। এসময় বেশ কয়েকজনকে টেনেহিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতেও তুলতে দেখা গেছে।
বিকেল ৩টার পর থেকেই জিপি হাউসের আশপাশে পুলিশের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আনা হয় একটি জলকামান। পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিপি হাউসের সামনে থেকে সরে যেতে বললে পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ তৈরি হয়। একপর্যায়ে বলপ্রয়োগ করে গেটের সামনে থেকে কর্মীদের সরিয়ে দিতে গেলেই পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয়। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক দফায় জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় কয়েকজন চাকরিচ্যুত কর্মী বাধা দিলে মৃদু লাঠিচার্জ করে তাদের কয়েকজনকে টেনেহিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তুলতে দেখা গেছে। তবে এখনও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই সেখানে অবস্থান করছেন চাকরিচ্যুত কর্মচারীরা।
আরও পড়ুন
তাদের ‘ন্যায্য পাওনা আদায় চাই, কারো দয়া নয়’, ‘জিপি ম্যানেজমেন্টের দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘এক দফা এক দাবি, ৫ শতাংশ মুনাফা দিবি’, ‘গ্রামীণফোনের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ম্যানেজমেন্টের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘বকেয়া না দিলে, পিঠের চামড়া থাকবেনা রে, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে ও স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এর আগে, অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলেন, গ্রামীণফোন জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের মনস্টার ভাবে। তারা কোনো কারণ না দেখিয়ে এবং আগে কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই খেয়ালখুশি মতো অবৈধভাবে কর্মীদের ছাঁটাই করেছে। তারা হঠাৎ করে ই-মেইল পাঠিয়ে একদিনেই অনেককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। এমনকি ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৬০ জন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে চাকরিচ্যুত ও অধিকারবঞ্চিত গ্রামীণফোন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আবু সাদাত মো. শোয়েব বলেন, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুনর্বহাল, মুনাফার ৫ শতাংশ বিলম্ব জরিমানাসহ ন্যায্য পাওনার দাবি এবং শ্রমিক স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এদিকে গ্রামীণফোন জানায়, গ্রামীণফোনের কিছু সাবেক কর্মী চাকরি সংক্রান্ত নানাবিধ দাবি-দাওয়া নিয়ে গত কয়েক মাস যাবত জিপি হাউজের সামনে সমবেত হচ্ছেন। আমাদের জানা মতে, তাদের বেশিরভাগ বেশ কয়েক বছর আগেই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যান এবং আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য গ্রহণ করেন। এছাড়া তারা যে দাবিগুলো তুলেছেন সেগুলো বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি গ্রামীণফোন শ্রদ্ধাশীল। তাই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতেই এসব বিষয়ের নিষ্পত্তি হবে বলে বিশ্বাস করে গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সম্মান করে। তবে উক্ত ব্যক্তিরা জিপি প্রাঙ্গণের প্রবেশ ও বহির্গমনের পথ অবৈধভাবে গত ৪ ফেব্রুয়ারিসহ বেশ কয়েকবার অবরূদ্ধ করে। ফলে গ্রামীণফোনের কর্মী, সরবরাহকারী ও গ্রাহকদের অবাধ চলাচল উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। তারা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জিপি হাউসে আটকা পড়েন। এ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়েন। গ্রামীণফোন দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং কর্মী ও গ্রাহকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জিপি হাউস সংলগ্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয়।
সম্প্রতি আমরা আরো লক্ষ্য করছি যে, এই ব্যক্তিরা গ্রামীণফোন সম্পর্কে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন।
আরএইচটি/এমএ