৫ লাখের বেশি নামজারি আবেদন পেন্ডিং, সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে

দেশের ৮ বিভাগের ৬৪ জেলায় ৫ লাখের বেশি নামজারি আবেদন পেন্ডিং হয়ে পড়ে আছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পেন্ডিং হয়ে আছে ঢাকা বিভাগে। আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে বলেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, দেশে সর্বমোট ৫ লাখ ৬ হাজার ৮৭ নামজারি আবেদন পেন্ডিং আছে। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় পেন্ডিং পড়ে আছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৮২টি আবেদন।
এ তালিকায় খুলনায় ৮২ হাজার ৯১৮, চট্টগ্রামে ৭৮ হাজার ৮০৫, রাজশাহীতে ৬৬ হাজার ৩০০, রংপুরে ৫২ হাজার ৫৮০, ময়মনসিংহে ৩৭ হাজার ৩৮৪, বরিশালে ২৯ হাজার ৪১৮ এবং সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ২৪ হাজার ২০০টি আবেদন পেন্ডিং পড়ে আছে।
আরও পড়ুন
এদিকে, বিষয়টি অবগত করে সম্প্রতি দেশের সকল সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) চিঠি পাঠিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসব পেন্ডিং নামজারির আবেদন আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয় জনবান্ধব ভূমিসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নাগরিকদের নির্বিঘ্নে এবং আরও সহজে ভূমিসেবা প্রদানের জন্য অনলাইন সেবাগুলোর ২য় উন্নততর ভার্সন গত ১ ডিসেম্বর থেকে চালু করা হয়েছে। আপডেটেড ভার্সনটি প্রচলন করার আগে অর্থাৎ ২৬ নভেম্বর ৪ লাখ ২ হাজার ২৫১টি নামজারি আবেদন পেন্ডিং ছিল। পেন্ডিংয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৫ লাখ ৬ হাজার ৮৭টি হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আগের পেন্ডিং আবেদনগুলো নিষ্পত্তিতে ধীর গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যথাসময়ে নামজারি আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় নাগরিকরা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন আবেদন নিষ্পত্তির পাশাপাশি বিশেষ কার্যক্রম (ক্রাশ প্রোগ্রাম) গ্রহণ করে পেন্ডিং নামজারির আবেদন আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
নামজারি বা মিউটেশন হচ্ছে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মালিকানা পরিবর্তন করা। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো বৈধ পন্থায় ভূমি বা জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড হালনাগাদ করাকেই নামজারি বা মিউটেশন বলা হয়। নামজারির মাধ্যমে জমির আগের জোতজমা থেকে খারিজ বা কর্তন হয়ে আবেদনকারীর নামে নতুন হোল্ডিং বা জোতের সৃষ্টি হয়।
কোনো ব্যক্তির নামজারি বা মিউটেশন সম্পন্ন হলে তাকে একটি খতিয়ান দেওয়া হয়, যেখানে তার অর্জিত জমির সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। এ হিসাব বিবরণী অর্থাৎ খতিয়ানে মালিক বা মালিকদের নাম, মৌজা নাম ও নম্বর (জেএল নম্বর), জমির দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমাণ, মালিকের জমির প্রাপ্য অংশ ও জমির পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে।
বর্তমানে জমির নামজারির ক্ষেত্রে ই-নামজারি পদ্ধতি চালু রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল মাধ্যমে নামজারি সম্পন্ন হচ্ছে। ২৮ দিনের মধ্যে এটা সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। ই-নামজারি করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করতে হয়।
আগে নামজারির কাজটি হতো হাতেকলমে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে পুরোপুরি অনলাইনে এ ব্যবস্থা চালু হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল, নামজারির কাজটি ২৮ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। তবে নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না ই-নামজারি, লাগছে গড়ে আরও বেশি সময়। দেশের ৮ বিভাগের ৬৪ জেলার গড় নিস্পত্তির সময় বর্তমানে ৩৩ থেকে ৪৭ দিন পর্যন্ত।
এসএইচআর/এআইএস