দোকানিদের ‘না’তে কোণঠাসা কোক-পেপসি, জায়গা নিচ্ছে দেশীয় পানীয়

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসী আঘাত যেমন বেড়েছে তেমনি দেশটির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভও বেড়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দল-মত নির্বিশেষে আপামর জনতা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ইসরায়েলি বর্বরতার।

শুধু মিছিল কিংবা স্লোগানেই নয় পণ্য বয়কটের মধ্যদিয়েও জানানো হচ্ছে প্রতিবাদ। এই বয়কটের মুখে পড়েছে জনপ্রিয় দুটি পানীয় ব্র্যান্ড— কোকাকোলা ও পেপসি। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের বয়কট বেশ জোরালোভাবেই চলছে।

সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর, ইসিবি, উত্তরা, খিলক্ষেতসহ আশপাশের এলাকার মুদি দোকান, রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকান ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে এখন আর আগের মতো কোক বা পেপসির বোতল দেখা যাচ্ছে না। ফ্রিজের তাক দখল করে রেখেছে দেশীয় ব্র্যান্ডের কোমল পানীয়।

দোকানিরা বলছেন, ইসরায়েলের প্রতি মানুষের বিরোধিতার আঁচ লেগেছে পানীয় ব্র্যান্ড দুটির ওপর। ফলে, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার জোরালো হয়েছে কোক-পেপসি বয়কট।

একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্রেতাদের একটি বড় অংশ এখন আর কোক বা পেপসি কিনতে চাইছেন না। বয়কটের ভয়ে তাই আগে থেকেই স্টক কমিয়ে দিয়েছেন তারা। অনেকে আবার একেবারেই বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি ব্যবসায়ী বলেন, আগে তো কোক-পেপসির প্রচুর চাহিদা থাকত। এখন মানুষ চাইছে না। দোকানে রাখলে অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে, তাই আর আনছি না। আবার কোক-পেপসি রাখলে দোকান বয়কটের ভয়ও আছে। তাই পেপসিকো কোম্পানির কোনো পণ্যই এখন আর রাখছি না। 

তবে এই চিত্র সব জায়গার নয়। কিছু দোকানে এখনও সীমিত পরিমাণে দেখা মিলছে কোক আর পেপসির বোতল। এর কারণ জানতে চাইলে মিরপুরের মাটিকাটা বাজারের একটি ফাস্ট ফুড দোকানের মালিক বলেন, ব্যবসা তো করতে হবে। যারা নিয়মিত খায়, তারা খুঁজবে। তবে সম্প্রতি আগের মতো আর সেই চাহিদা নেই। সেজন্য আমরাও খুব বেশি স্টক করছি না। যা আছে তাড়াতাড়ি শেষ করতে চাইছি।

আবার অনেক ব্যবসায়ী বাণিজ্যিক ক্ষতির কথা না ভেবে নিজের বিবেকের শান্তির জন্য কোক-পেপসি বর্জনের পথে হাঁটছেন বলে জানান।

মিরপুরের মুদি দোকানি শফিকুল ইসলাম বলেন, ফিলিস্তিনের ভাই-বোনদের যন্ত্রণা দেখে আমি এই পণ্য বিক্রি করতে পারি না। কোক-পেপসি ইসরায়েলি অর্থনীতির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত, তাই আমি এদের জায়গায় দেশীয় পানীয় রেখেছি। ব্যবসায়িক ক্ষতি তেমন একটা হচ্ছে না। কারণ এরই মধ্যে মানুষ মোজো, ফ্রেশ কোলা, আরসি কোলাসহ অন্যান্য দেশীয় ব্র্যান্ডে অভ্যস্ত হচ্ছেন। 

কেবল দোকানিরাই নন, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ ক্রেতারা সোশ্যাল মিডিয়া ও বাস্তব জীবনে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোকাকোলা ও পেপসিকোর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। 

আরএইচটি/এমজে