পাপন দম্পতির ৩২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, লেনদেন ৭৯২ কোটি

৩২ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৭৯২ কোটি টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন ও তার স্ত্রী রোকসানা হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
একই সঙ্গে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় পাপনের মেয়ে রুশমিলা রহমান (অহনা), পুত্র রাফসান রহমান, আরেক মেয়ে সুনেহরা রহমান (তন্নি) ও তার জামাতা রাকিন আল মাহমুদসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে সম্পদের নোটিশ জারি করা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির মামলা করেছে সংস্থাটি।
দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এসব মামলা দায়ের করেন।
সোমবার (৫ মে) দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, নাজমুল হাসান পাপনের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭ লাখ ৪১ হাজার ১২ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ৭৪২ কোটি ৭৩ লাখ ৮৪ হাজার ৬৮৬ টাকার ঘুষ ও দুর্নীতির সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন
তার স্ত্রী রোকসানা হাসানের বিরুদ্ধেও ১২ কোটি ১২ হাজার ২১৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ৪৯ কোটি ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ১১০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
একই সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চাকরিচ্যুত নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া তাদের পরিবারের সদস্যসহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য দুদক আইনের ২৬(১) ধারা অনুযায়ী নোটিশ জারির সুপারিশ করা হয়েছে।
যাদের মধ্যে রয়েছেন পাপনের কন্যা রুশমিলা রহমান (অহনা), পুত্র রাফসান রহমান, কন্যা সুনেহরা রহমান (তন্নি), তাঁর জামাতা রাকিন আল মাহমুদ এবং ইসমাইল হায়দার মল্লিকের স্ত্রী সুলতানা নিঝুম।
এছাড়া পাপনের বিরুদ্ধে দুদকের আরেকটি অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। সেই অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, তিনি বিসিবি ও সরকারি অর্থের অপব্যবহার করে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে ‘দেশে-বিদেশে বিপুল জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ’ অর্জন করেছেন। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন।
সরকারের পালাবদলের পর গত ১৮ মার্চ দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে পাপনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর ঘোষণা দেয়। বিসিবির সভাপতি থাকাকালে পাপনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে ১৬ মার্চ নাজমুল হাসান, তার স্ত্রী রোকসানা হাসান, মেয়ে সুনেহরা রহমান, রুশমিলা রহমান এবং ছেলে রাফসান হাসানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে এ বিষয়ে করা আবেদনে বলা হয়, পাপন সরকারি অর্থ ও বিসিবির তহবিল আত্মসাৎ করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক মার্চের মাঝামাঝিতে কমিশনের উপপরিচালক সাইদুজ্জামানকে দলনেতা করে তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করে। অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক সুবিমল চাকমা।
আরএম/এমএ