সরকারি দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে উড়োচিঠি, জানেন না অভিযোগকারী!

বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সম্বলিত চিঠি পাঠানো হচ্ছে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে। তবে এসব চিঠিতে যাদের নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে, তারাই বলছেন– এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা, পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে এসব চিঠির উৎস ও উদ্দেশ্য নিয়ে।
বিচারকদের বিরুদ্ধে উড়োচিঠি
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে কর্মরত কয়েকজন বিচারকের বিরুদ্ধে নাম-সই জাল করে চিঠি পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে।
এসব চিঠির বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা আইনজীবী সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি সম্প্রতি উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ২৭ মার্চসহ বিভিন্ন তারিখে মহানগর দায়রা জজ আদালত ও সিএমএম আদালত ঢাকায় কর্মরত বিচারকদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগপত্র ঢাকা আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য বা কার্যকরী কমিটি ২০২৫-২৬-এর কোনো সম্পাদক বা কার্যনির্বাহী সদস্য পাঠাননি। বার ও আদালতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক বিনষ্ট করার লক্ষ্যে এ বেনামি চিঠিগুলো পাঠানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এসব বেনামি চিঠির বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য সম্পৃক্ত নয়। ঢাকা আইনজীবী সমিতি এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। সমিতির নামে এ বিষয়ে পাঠানো চিঠিতে সমিতি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ভবিষ্যতেও ঢাকা আইনজীবী সমিতি এর দায়দায়িত্ব বহন করবে না।
আরও পড়ুন
‘এ ধরনের চিঠির কোনো ভিত্তি নেই’
এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রুহুল আমিন নামের একজন সমিতির সদস্যের নাম দিয়ে বিচারকদের বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রণালয়সহ নানা দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমাদের সমিতিতে ৬৪ জন রুহুল আমিন আছেন। আমরা সবাইকেই জিজ্ঞেস করেছি। তারা সবাই চিঠির বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করেছেন। এ ধরনের চিঠির কোনো ভিত্তি নেই।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের সমিতির মিটিংয়ে আলোচনা হয় এবং রেজুলেশনও হয়। এরপর আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির বরাবর চিঠি দিয়েছি।
জেলা রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধেও উড়োচিঠি
শুধু বিচারক নয়, একজন জেলা রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধেও একইভাবে নাম-সই জাল করে চিঠি পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে।
গত ২৯ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মো. রমজান খানের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত তিনজন নকলনবিশের নাম ব্যবহার করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়।
এর মধ্যে একজন হলেন নকলনবিশ আশরাফুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, তার ভুয়া স্বাক্ষরে চিঠিটি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানার পর তিনি আইন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে চিঠি দিয়েছেন।
‘আমি নিজেই কিছু জানি না’
এ বিষয়ে আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার নাম ও ভুয়া সই দিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে চিঠি গেলেও এ বিষয়ে আমি নিজেই কিছু জানি না। এটা আমার জন্য বিব্রতকর।
তিনি আরও বলেন, ওই জেলা রেজিস্ট্রার অনেক ভালো মানুষ। উনি সবার উপকার করেন। কেন আমি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেব? আমি এই চিঠির বিষয়ে কিছুই জানি না। চিঠিতে আমার ভুয়া স্বাক্ষর বসানো হয়েছে।
আশরাফুল জানান, বিষয়টি জানার পর তিনি আইন ও বিচার বিভাগের সচিবকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন।
চিঠিতে আশরাফুল ইসলাম বলেন, একটি অভিযোগনামা কে বা কারা আমার নামসহ আরও দুইজন নকলনবিশের নাম ব্যবহার করে মুন্সিগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মো. রমজান খানকে জড়িয়ে বদলি বাণিজ্যসহ নানাবিধ অপবাদ লিখে বিভিন্ন দপ্তরে উড়োচিঠি পাঠিয়েছেন। একজন আমাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আমি অবগত হই। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, আমার জানামতে এবং নকলনবিশের সাংগঠনিক কার্যক্রম করার আগে যতদূর আমি জেনেছি এবং দেখেছি, তাতে আমার কাছে মো. রমজান খান স্যার অত্যন্ত ভালো মানুষ, পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি সরকারি নিয়মকানুন, বিধিবিধান মেনে চলা একজন চৌকস কর্মকর্তা।
এতে আরও বলা হয়, এরকম কোনো চিঠি কিংবা অভিযোগ আমি কখনো করিনি। আমি অভিযোগনামাটি অস্বীকার করছি এবং এসব কাজের সঙ্গে যেসব মহল জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আগে এ বিষয়ে জেনে-বুঝে নিই। এখন কোনো মন্তব্য নেই আমার।
এসএইচআর/এসএসএইচ