আওয়ামী লীগের দোসর তালিকায় স্বাস্থ্যের দুই সচিবের নাম

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন এমন কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম জুলাই ঐক্য। তালিকায় স্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারীর নাম উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ৪৪ জন সচিব ও ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নাম প্রকাশ করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রশাসনে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করা এসব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর দাবি জানানো হয়েছে। এ তালিকা প্রধান উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন সচিবের কাছে হস্তান্তরের ঘোষণাও দিয়েছে সংগঠনটি। দাবি না মানলে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়।
আরও পড়ুন
তালিকায় মো. সাইদুর রহমান সম্পর্কে বলা হয়, “তিনি স্বৈরাচারের দোসর ও সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তা। আওয়ামী আমলে অতিরিক্ত সচিব ও গ্রেড-১ পেয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে থাকাকালীন সময়ে ব্যাপক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।”
এছাড়াও দাবি করা হয়, “২০১৮ সালের রাতের ভোটের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। বর্তমান সরকারের সময় তাকে চুক্তিভিত্তিক সচিব হিসেবেও পদায়ন করা হয়, যা প্রশ্নবিদ্ধ।”
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী সম্পর্কে বলা হয়, “তিনি আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সুবিধাভোগী এবং দলীয় কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।”
জুলাই ঐক্যের দাবি, “এমন একজন পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তা সচিব পদে বহাল থাকলে সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
জুলাই আন্দোলনে নিহত মুনতাছির রহমান আরিফের বাবা গাজিউর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমার ছেলে চেয়েছিল ফ্যাসিবাদী সরকার না থাকুক। অথচ যারা সেই সরকারের দোসর ছিল, তারা আজও বহাল তবিয়তে রয়েছে। আমরা মামলা করেছি, কিন্তু একটিও বিচার হয়নি, বরং উল্টো আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”
সংগঠনের নেতা প্লাবন তারিক বলেন, “আওয়ামী আমলে সুবিধা নেওয়া এসব সচিবরা প্রশাসনে দাপটের সঙ্গে রয়েছেন। কেউ কেউ ডিসি হিসেবে থাকাকালীন নিরীহ মানুষের বাড়িঘর ভেঙেছেন। তাদের সরাতে না পারলে গণতান্ত্রিক প্রশাসন গঠন সম্ভব নয়।”
এদিন জুলাই ঐক্যের পক্ষ থেকে ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নামও প্রকাশ করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপরে গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সংগঠনের আরেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, “ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের সব স্তরের লোকদের কাজে লাগানো হয়েছে। এই তালিকা সেই চিত্রই তুলে ধরে।”
তালিকা প্রকাশ নিয়ে সংগঠনটি বলে, “আমরা ঝুঁকি নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করেছি। জুলাই আন্দোলনকে ব্যর্থ হতে দেব না।”
টিআই/এআইএস