নগর ভবনের সামনে নুরের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ, পাল্টা বিবৃতি

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের পদত্যাগ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে নগর ভবনের সামনে দিনভর বিক্ষোভ করেছে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। তবে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ায় নুরুল হক নুর নগর ভবনের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন।
পরে বুধবার (২১মে) রাতে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ডিএনসিসির অভিযোগের বিষয়ে পাল্টা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২১ মে) ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারজানা ববির পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, পছন্দের ঠিকাদার কাজ না পাওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নগর ভবনের সামনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমানকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার জন্য ১৮ মে মুঠোফোনে ফোন করে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তাকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালার আইনি বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেন এবং আইনের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই মর্মে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু নুরুল হক তার কোনো কথা না শুনে তাকে কাজ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আর ডিএনসিসির অফিসে তালা লাগানোর হুমকি দেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তার প্রেক্ষিতে গতকাল (২০ মে) মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে গুলশান-২ এর নগর ভবনের সামনে কিছু লোক নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের ব্যানারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ডিএনসিসি প্রশাসকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। যাতে ডিএনসিসির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃক ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করা হয়েছে দাবি করে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পছন্দের ঠিকাদার কাজ না পাওয়ায় ডিএনসিসি নগর ভবনের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে নুরুল হক নূর।’ ডিএনসিসির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এমন একটি বিবৃতি গণ অধিকার পরিষদের নজরে এসেছে।
এবিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর নেতা ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণের পর প্রশাসকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারেন না। মোহাম্মদ এজাজের হিযবুত তাহরীর ও জঙ্গিবাদের কার্যক্রমে যুক্ত থাকা ও একই অভিযোগে ২০১৫ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুক পোস্টেও উঠে এসেছে। যে কারণে সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই মুহাম্মদ এজাজকে প্রশাসক পদ থেকে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। যেখানে গণঅধিকার পরিষদ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সমর্থন জানায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন তাদের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, নুরুল হক নুরের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ায় গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সামনে বিশৃঙ্খলা করেছে। যা একেবারে অসত্য, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। বরং দরপত্রে অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও গণঅধিকার পরিষদের একজন সদস্যকে কমিশন ব্যতীত কাজ না দেওয়ার ঘটনায় প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে অবহিত করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে অবহিত করতে বলেন। মুহাম্মদ এজাজের পরামর্শেই নুরুল হক নুর তাকে বিষয়টি তাকে জানান। এর আগে গাবতলী পশুর হাটসহ কয়েকটি বিষয় গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে যে, কমিশন ও পছন্দের লোক ব্যতীত ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ অন্য কাউকে কোনো ধরনের কাজ দেন না।
আরও পড়ুন
মূলত নিজের অভিযোগ আড়াল করে অন্যদিকে জনদৃষ্টি ফেরাতে মোহাম্মদ এজাজ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়াচ্ছে। এমনকি গণঅধিকার পরিষদের গত কালকের বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করার জন্য নিজের মামাসহ বেশ কয়েকজনকে পাঠিয়ে আর্থিক প্রলোভনের মাধ্যমে সমঝোতা করতে চেয়েছে। নিজেও গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের অসংখ্যবার কল করেছে। কিন্তু গণঅধিকার পরিষদ কর্মসূচি স্থগিত করেনি।
গণঅধিকার পরিষদ অনতিবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং দুর্নীতিবাজ এজাজকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের পদ থেকে অপসারণের পাশাপাশি দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছে।
এএসএস/এমএসি/এসআইআর