অনাস্থা থাকলেও ইসি’র কাছেই এনআইডি রাখার পক্ষে বিশিষ্টজনরা

নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে অনাস্থা থাকলেও ইসি’র কাছেই এনআইডি রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
রোববার (৬ জুন) ‘সরকার কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার উদ্যোগ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল নাগরিক সংলাপে অংশ নিয়ে মতামত তুলে ধরেন বিশিষ্টজনরা। সংলাপের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, বিচারপতি এম এ মতিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল বলেন, কোনো পরামর্শ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের মতো এতো বড় একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে শুধুমাত্র একটা চিঠি দিয়ে এনআইডি কার্যক্রম সরিয়ে নিয়ে যাবে এটা অবাক করার মতো বিষয়। আমার মতে নির্বাচন কমিশনের বোঝা উচিত তারা নিজেদেরকে কোথায় নামিয়েছে। যেই সরকারের জন্য ইসি দেশের ১৬ কোটি মানুষ, ১১ কোটি ভোটারের সঙ্গে অন্যায় করেছে; সেই সরকারের কাছে তারা কতটা মর্যাদাহীন, তাদের অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র হেয় করার মতো, এটা কমিশনের বুঝতে হবে।
তিনি বলেন, এনআইডি অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে গেলে আরও বিপদজনক হবে। এটাই আমাদের আশঙ্কার জায়গা। নির্বাচন কমিশন তো সরাসরি মানুষকে নিপীড়ন করেনি। এনআইডি’র তথ্যভাণ্ডারটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলে গেলে আগামী নির্বাচনটা আরও এফিশিয়েন্টলি ও আরও গোপন বা নিপীড়নভাবে করার পরিকল্পনা করছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পুলিশ একটা নিপীড়ন বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এনআইডি’র তথ্য পুলিশের হাতে চলে গেলে ভিন্ন মতাদর্শের যারা তাদের নিপীড়নে সহজ হয়ে যাবে। বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক আরও দমনপীড়নে ব্যবহার করা হবে। অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও পুলিশের কাছে কোনো সেবা পাই না। পুলিশ এই দায়িত্বটা পেলে আরও বেশি হয়রানির শিকার হবে সাধারণ মানুষ। নির্বাচন কমিশনের কাছে যতই অনস্থা থাকুক তারপরও চাইব এনআইডিটা তাদের কাছে থাকুক।
সংলাপে রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সেবা গেলে জনগণের ভোগান্তি আরও বাড়বে। কারণ আমরা দেখেছি পুলিশি ভেরিফিকেশনের কারণে সব ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পান না।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, আমরা গণতন্ত্র বলি, আইনের শাসন বলি, এই সরকার কোনোকিছুর তোয়াক্কা করে না। সরকার নির্বাচন কমিশনকে তার অধিনস্থ একটি অনুবিভাগ মনে করে। ২০১৪ সালে দেখলাম, ১৫৩ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী, ২০১৮ সালে দেখলাম আগের রাতে ভোট হয়ে গেছে। আগামী নির্বাচন নতুন তরিকার নির্বাচন হবে।
সরকার আমাদের প্রজাভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার কোনো কিছুর ধার ধারে না। আগামী নির্বাচনের জন্য নতুন কোনো তরিকা নিয়ে ভাবছে। আগের নির্বাচনগুলোতে সরকার খুব বেশি সময় পায়নি। এবার অনেক সময় পাবে।
এসআর/জেডএস