ঘূর্ণিঝড়ে আগাম পদক্ষেপ জোরদারে বিশেষ পূর্বাভাস টুলকিট উদ্বোধন

বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ে আগাম পদক্ষেপ জোরদার করতে স্টেপ প্রকল্পের আওতায় একটি ঘূর্ণিঝড়-নির্দিষ্ট প্রভাব পূর্বাভাস টুলকিট উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে আগাম পদক্ষেপ ও দুর্যোগ সহনশীলতা জোরদার করার লক্ষ্যে এটি তৈরি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) ঢাকায় এক কর্মশালায় রিজিওনাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি-হ্যাজার্ড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম আনুষ্ঠানিকভাবে টুলকিটটি উপস্থাপন করে। এই টুলকিটটি বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলে পূর্বাভাসভিত্তিক আগাম পদক্ষেপ জোরদারকরণ (স্টেপ)— প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই প্রকল্পটি কনসোর্টিয়ামের অংশীদার সংস্থা কোরডেইড, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং ইউনাইটেড পারপাসের সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই টুলকিট দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি নির্দেশ করে, যেখানে প্রচলিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসের পরিবর্তে প্রভাবভিত্তিক পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে— যা একটি জনমুখী, ঝুঁকিসচেতন পদ্ধতি এবং যা জটিল আবহাওয়ার তথ্যকে স্থানীয় ঝুঁকি ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপে রূপান্তর করে।
সম্প্রতি আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের সভায় সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা প্রভাব-ভিত্তিক পূর্বাভাসের গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং বলেন যে, আগাম পূর্বাভাসকে কার্যকর আগাম পদক্ষেপের সাথে সংযুক্ত করা আবশ্যক, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
রাইমস-এর কান্ট্রি প্রোগ্রাম লিড রাইহানুল হক খান বলেন, শুধু পূর্বাভাস যথেষ্ট নয়। প্রকৃত সহনশীলতা তৈরি করতে হলে, আমাদেরকে পূর্বাভাসের সাথে আগাম পদক্ষেপকে সংযুক্ত করতে হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুন্নাহার বলেন, তথ্যকে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর জ্ঞানে রূপান্তর করে তা ব্যাপকভাবে প্রচার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করতে হবে।
অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গারের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, একটি সঠিক ও সময়োপযোগী পূর্বাভাসে প্রতিক্রিয়া ব্যয়ে এক টাকা বিনিয়োগ করলে ১৬ টাকা সাশ্রয় সম্ভব। তিনি রাইমস'র এই টুলকিটের কার্যকারিতা ও শক্তিশালী কাঠামোর প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মোমেনুল ইসলাম পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বলেন, সমন্বয়, আনুষ্ঠানিক চুক্তি, তথ্য বিনিময়, জনবল এবং দক্ষতা উন্নয়ন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে যেন সঠিকভাবে পূর্বাভাস প্রচার ও বাস্তবায়ন করা যায়।
ইকো বাংলাদেশের প্রধান আনা অরলানদিনি বলেন, এই পদ্ধতির সম্ভাবনা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এবং তা বাস্তবায়নে সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অর্থায়ন জরুরি।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির পরিচালক আহমদুল হক বলেন, আইবিএফ ব্যবস্থার রূপান্তর এখন অতীব প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য খাতে খাতভিত্তিক আগাম পদক্ষেপ কার্যকর করতে হবে।
জেইউ/এমজে