ভাসানচরে উৎসুক জনতা যেতে পারবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রয়োজন ছাড়া ভাসানচরে উৎসুক জনতা যেতে পারবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বুধবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রীর নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি, উৎসুক জনতা ভাসানচর অভিমুখী নোয়াখালী থেকে যাতায়াত শুরু করেছে। আপনাদের মাধ্যমে (সাংবাদিক) জানাতে চাই, উৎসুক জনতা যাতে ভাসানচরে যাওয়া থেকে নির্বৃত্ত থাকে। প্রয়োজন ছাড়া যেন ভাসানচরে উৎসুক জনতা গিয়ে সেখানে কোনো সমস্যা না তৈরি করে। আজকের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের সম্মতিতেই তাদের ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে দাবি করে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, কাউকে জোর করে সেখানে পাঠানো হয়নি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চারদিকে কাটা তারের বেড়া দেওয়ার ব্যাপারে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু কাঁটাতারের বেড়া নয়, চারদিকে ওয়াকওয়ে থাকবে, সেখানে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাও থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্যই এ ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ কাজটি খুব তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য আমাদের এ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এটা সুসম্পন্ন করা হবে। রাতের টহল আরও জোরদার করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পগুলোতে আমরা দেখি, যারা অবস্থান করছেন তারা মাঝেমাঝেই মিয়ানমারে চলে যাচ্ছেন। সেখান থেকে তারা ইয়াবা নিয়ে আসেন। সেগুলোর লাভ-লোকসানের ভাগাভাগি নিয়ে সেখানে নাকি প্রায়শই কলহ হয়। সে কলহের জের ধরে আমরা শুনেছি খুনাখুনিও হচ্ছে এবং দুই-চারটি খুনও হয়েছে। এগুলো যাতে না বাড়ে, তাই পুলিশের টহল রাতে ও দিনে অব্যাহত থাকবে।
গত ১৪ ডিসেম্বর বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি গঠন করে গেজেট জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে ১৭ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।
এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিবকে কমিটিতে সদস্য করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পুলিশ মহাপরিদর্শক, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক, সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।
কমিটি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) ক্যাম্প এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ব্যবস্থাপনা ও প্রত্যাবাসনসহ সব কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করবে।
এ কমিটিকে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স, ভাসানচরে স্থানান্তরের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় এক্সিকিউটিভি কমিটির কার্যক্রম, নিরাপত্তা প্রদান ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিষয়ে গৃহীত সব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন, পুনর্নিরীক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলো দেখতে বলা হয়।
প্রতি তিনমাসে কমিটিকে কমপক্ষে একটি সভার আয়োজন করতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।
এসএইচআর/এমএইচএস