আনন্দের ঈদযাত্রায় রাজধানী ছাড়তে যানজটে ভোগান্তি

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে বুধবার (৪ জুন) ছিল শেষ কর্মদিবস। দীর্ঘ ছুটিতে সবার উদ্দেশ্য পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্মীয়দের নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে পবিত্র ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা। এই আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীবাসী সড়ক ও রেলপথের পাশাপাশি নৌপথে নাড়ির টানে রওনা হয়েছেন। কিন্তু যাত্রাপথ যেটাই হোক, গন্তব্য পৌঁছাতে সবার ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট।
ঈদযাত্রায় রাজধানীতে কোন পথের চিত্র কেমন ছিল সেটিই দেখে নেওয়া যাক–
ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিটও নেই, জরিমানায় অতিরিক্ত যাত্রী
বুধবার ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের (কমলাপুর) টিকিট কাউন্টারে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু বেশিরভাগই ফিরছেন খালি হাতে। আসনসহ টিকিট তো নেই, স্ট্যান্ডিং টিকিটটি পর্যন্ত পাচ্ছেন না তারা। ফলে বাধ্য হচ্ছেন জরিমানাসহ গন্তব্যের টিকিট সংগ্রহ করে ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী হতে।
জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিকিট তো ১০ দিন আগেই ছেড়েছে কিন্তু সেগুলো আমরা পাইনি। সবাই তো টিকিট পায় না। ঈদ তো আর দুইদিন পরেই, বাড়িতে যেতে হবে। স্টেশনে এসে স্ট্যান্ডিং টিকিটের খোঁজ করলাম কিন্তু পাচ্ছি না। কিন্তু গেটে দেখলাম জরিমানা নিয়ে টিকিট দিচ্ছে টিটিইরা।

এদিকে ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষের ভ্রমণ সুবিধার্থে ১০টি বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এসব ট্রেন ৪ জুন থেকে ঈদের আগে পরে ৯ দিন চলাচল করবে। ‘ঈদ স্পেশাল ট্রেন’ পেয়ে যাত্রীরাও অনেক খুশি। যেখানে ট্রেনের আসনের টিকিটই পাওয়া যায় না, সেখানে ঈদ উপলক্ষ্যে আলাদা ট্রেন চালানোতে তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।
স্পেশাল ট্রেনের দেওয়ানগঞ্জগামী যাত্রী সাব্বির বলেন, একটি অতিরিক্ত স্পেশাল ট্রেন দেওয়াতে আমরা খুবই খুশি হয়েছি। ট্রেনের টিকেট ১০ দিন আগে কেটে ছিলাম। দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছে ১৭৫ টাকা, সুলভ শ্রেণির সিট। জাস্ট হেলান দিয়ে বসে যাওয়া যায়। তবে সিট যাই হোক, নিরাপদে বাড়ি যেতে পারব এটা ভেবেই ভালো লাগছে।
আরও পড়ুন
সড়কে যাত্রী অনেক, রাজধানী ছাড়তে ধীরগতি
ঈদযাত্রায় সড়ক পথে রাজধানী ছাড়েন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ। সড়কে বুধবার সকাল থেকেই ঢাকা ছাড়ার হিড়িক দেখা যায়। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস হওয়ায় বিকেল গড়াতেই রাস্তায় ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের গুলিস্তান থেকে পোস্তাগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজ পাড় হতেই দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগে যায়।
অন্যদিকে, ঈদযাত্রায় সর্বোচ্চ চাপ এখন গাবতলী-টেকনিক্যাল, কল্যাণপুরে। কোথাও যানজট, কোথাও ধীরগতির কারণে উত্তরবঙ্গ রুটের অধিকাংশ ঢাকা ফেরত বাস পড়ছে ভোগান্তিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভারের হেমায়েতপুর থেকে রাজধানীর কল্যাণপুর-শ্যামলী পর্যন্ত সড়কে যান চলাচলে গাড়ির জট, কোথাও ধীরগতি। সংগত কারণে সব রুটের বাস আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে।
রাত ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী পর্বতা সিগনাল থেকে মাজার রোড, টেকনিক্যাল পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট। থেমে থেমে কিছুক্ষণ পর পর সচল হচ্ছে গাড়ির চাকা। ঈদযাত্রার এই সময়েও গাবতলীর মতো সড়কে হরহামেশা চলতে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাজার রোড ও টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর খালেক পাম্প সিগনালে ইউটার্ন বন্ধ রেখেছে ট্রাফিক পুলিশ। ঈদযাত্রার দূরপাল্লার বাসসহ বড় বড় সব যানবাহনকে গণভবন ও আসাদগেট গিয়ে ইউটার্ন নিতে পারছে। তার ওপর ঈদযাত্রার যাত্রীদের যত্রতত্র পারাপার, গরুর সঙ্গে হেঁটে সঙ্গে একদল মানুষও– এসবও সড়কে ধীরগতির কারণ। যে কারণে সড়কে গতি কমেছে।
যাত্রীর চাপ বেশি লঞ্চেও
ছুটি শুরুর আগের দিন সড়ক ও রেলপথের মতো সন্ধ্যা নামতেই একই চিত্র ফুটে উঠেছে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায়, যেখান থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ৪১টি রুটে যাত্রা করছে ছোট বড় বহু লঞ্চ।
বুধবার সন্ধ্যায় সদরঘাটে দেখা যায়, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বিকেল থেকেই বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে পুরো টার্মিনাল যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। শিশু থেকে বৃদ্ধ– সব শ্রেণির যাত্রীর আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়।
বরিশালগামী যাত্রী সোলাইমান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে লঞ্চে আগের মতো ভিড় হয় না, তবে আজ মোটামুটি ভালোই যাত্রী আছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে লঞ্চে যাত্রা আরামদায়ক, তাই আমার মতো অনেকেই লঞ্চকেই বেছে নিচ্ছেন। লঞ্চে তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও গুলিস্তান থেকে অনেককেই হেঁটে সদরঘাট আসতে হয়েছে। যানজটের কিছুটা ভোগান্তি ছাড়া ঈদযাত্রা স্বস্তিরই বলা চলে।

কুয়াকাটা-২ লঞ্চের সুপারভাইজার তুষার আহমেদ বলেন, অফিস-আদালত বন্ধ হওয়ায় যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আরও বাড়বে বলে আশা করছি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সড়কপথের তুলনায় নৌপথ অনেক স্বস্তিদায়ক– যাত্রা আরামদায়ক, ভাড়াও তুলনামূলক কম হওয়ায় যাত্রীদের আগ্রহ এখনো রয়েছে।
লঞ্চঘাট এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে কোতোয়ালি-সূত্রাপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, গত রোজার ঈদেও সদরঘাটগামী যাত্রীরা স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পেরেছিলেন। এবারও যেন মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে পারে, সেজন্য আমরা পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। টার্মিনালের সার্বিক নিরাপত্তা এবং যানজট নিরসনে প্রতিটি পুলিশ সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সদরঘাট টার্মিনাল কন্ট্রোল অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাত ৮টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে বিভিন্ন রুটে ৬৯টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে এবং রাত ১২টা পর্যন্ত ৯০টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা।
এনআর/এসএসএইচ