সরকারি অর্থয়ানে বিদেশ ভ্রমণ-সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে লাগাম টানলো সরকার

সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধনের লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সব ধরনের যানবাহন ক্রয় খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা বাদে নতুন আবাসিক, অনাবাসিক ও অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি অর্থায়নে সব ধরনের বৈদেশিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে সই করেছেন উপসচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
এতে বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধনের লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর কর্পোরেশন এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কতিপয় খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয়ে সরকার কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন বাজেটের আওতায় সব ধরনের থোক বরাদ্দ থেকে ব্যয় বন্ধ থাকবে। সব ধরনের যানবাহন ক্রয় খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরোনো টিওঅ্যান্ডইভুক্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ব্যতীত নতুন আবাসিক, অনাবাসিক ও অন্যান্য ভবন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। তবে চলমান নির্মাণ কাজ ন্যূনতম ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে- বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে।
অপরদিকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের যানবাহন ক্রয় বন্ধ থাকবে- বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অধিগ্রহণ কার্যক্রমের সব আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন করে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন গ্রহণ সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে।
এতে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে জিওবি বাবদ সংরক্ষিত এবং মন্ত্রণালয়, বিভাগের অনুকূলে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে সংরক্ষিত জিওবির সম্পূর্ণ অংশ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন গ্রহণ সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে।
এছাড়া পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে সব ধরনের বৈদেশিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে- বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ কর্তৃক প্রদত্ত স্কলারাশিপ, ফেলোশিপের আওতায় বৈদেশিক অর্থায়নে মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নের নিমিত্ত বিদেশ ভ্রমণ।
২. বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীদের সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ।
৩. পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থায়নে স্টাডি ট্যুর ব্যতীত পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যাবে। তাছাড়া, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মৌলিক ও আবশ্যিক প্রশিক্ষণের বৈদেশিক অংশ উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা যাবে।
আরও পড়ুন
৪. প্রি শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই), ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপ্ট টেস্টের (এফএটি) আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারির ১ নম্বর স্মারকে জারি করা পরিপত্র কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
৫.বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বরের ১২ নম্বর স্মারকে জারি করা পরিপত্র অনুসরণ করতে হবে।
এমএম/এমএন