জিপিএ-৫ না পেয়েও বিসিএস ক্যাডার হলেন রমিজ

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত জিপিএ–৫ পাননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই স্বপ্ন দেখেছিলেন বিসিএসের। শুরুটা ছিল বেশ অনিশ্চিত—কী পড়তে হবে, কোন বই লাগবে, তাও জানতেন না ঠিকভাবে। বন্ধুদের সঙ্গে রেলস্টেশনে বসে গ্রুপ স্টাডি করেছেন। টিউশনি করে চালিয়েছেন নিজের খরচ। সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্নই ছুঁয়ে ফেলেছেন সজিবুল ইসলাম রমিজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গণিত বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী ৪৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
রমিজের জন্ম কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ডেমুশিয়া ইউনিয়নের গান্ধিপাড়ায়। বাবা এজার আহমেদ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আর মা ছেনোয়ারা বেগম গৃহিণী। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। শিক্ষা জীবনের শুরু ডেমুশিয়া মোহছেনিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায়। এরপর ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন জিপিএ ৪ দশমিক ৭৫। ২০১৪ সালে কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪ দশমিক ৮ পেয়ে।
২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ৪৯তম ব্যাচে ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন রমিজ।
এ বিষয়ে রমিজ বলেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই স্বপ্ন ছিল বিসিএস। কিন্তু সেটি ছিল কঠিন, দীর্ঘ এবং ত্যাগ-তিতিক্ষায় ভরা এক পথচলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ থেকে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করি। ষোলশহর রেলস্টেশনে বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। শুরুটা খুব দুর্বল ছিল- কী পড়ব, কোন বই লাগবে, কিছুই জানতাম না।
রমিজ ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো অংশ নেন। যেখানে তিনি নন-ক্যাডারে ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তিনি কর্মরত রয়েছেন বান্দরবান সরকারি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এরপর ৪৩তম বিসিএসে অংশ নিলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাননি। একসময় তার মনে হয়েছিল- এই পথ বুঝি এখানেই শেষ। কিন্তু পরিবারের উৎসাহ, বন্ধুদের সাহস, আর নিজের হার না মানা মানসিকতা আবারও তাকে দাঁড় করিয়ে দেয়।
রমিজ বলেন, ৪৩তম বিসিএসে ব্যর্থ হয়ে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। তবে হাল ছাড়িনি। আবার প্রস্তুতি নিয়ে ৪৪তম বিসিএসে অংশ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে নির্বাচিত হই। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। বিসিএস কেবল চাকরি নয়, এটি ধৈর্য, আত্মত্যাগ আর পরিবারকে গর্বিত করার নাম। অনেক রাত জেগে পড়েছি, টিউশনি করে নিজের খরচ চালিয়েছি। বাবা-মা সব সময় পাশে থেকেছেন। তাদের স্বপ্ন ছিল, আমি যেন মানুষের মতো মানুষ হই।
তার এই পথ চলায় সঙ্গী ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী এবং বর্তমান জীবনসঙ্গী সালমা আক্তার। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সালমা আক্তার বলেন, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে ব্যর্থ হলেও আমি তাকে বলতাম, তুমি হাল ছেড়ো না। আজ তার ফলাফলে আমরা গর্বিত।
রমিজ জানান, তার মূল অনুপ্রেরণা ছিলেন বাবা-মা। আমার এলাকায় কোনো বিসিএস ক্যাডার নেই। তাই বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল, আমি যেন প্রথম হই। আজ তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রমিজ বলেন, পরিশ্রম ছাড়া কিছুই সম্ভব না। বিসিএস দিতে হলে কঠোর অধ্যবসায়, ধৈর্য এবং একাগ্রতা দরকার। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনাকে প্রস্তুতির প্রতিটি ধাপে গঠনমূলক হতে হবে।
এদিকে ১০ জুলাই প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলে অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত জিপিএ-৫ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের উদ্দেশ্যে ৪৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত সজিবুল ইসলাম রমিজ বলেন, জিপিএ-৫ না পাওয়া মানেই চূড়ান্ত সফলতা নয়। আমিও এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাইনি, কিন্তু স্বপ্ন দেখে, পরিশ্রম করে আজ আমি বিসিএস ক্যাডার হয়েছি। জীবনের আসল পরীক্ষাগুলো সামনে। আর প্রতিটা চ্যালেঞ্জই নতুন সুযোগ নিয়ে আসে। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো, পরিশ্রম চালিয়ে যাও- সফলতা একদিন আসবেই।
এমআর/এমএন