বাসাভাড়ার চুক্তি করবেন? কী কী লাগবে জেনে নিন

বেশিরভাগ সময়ই মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বাসা, ফ্লাট ভাড়া নেওয়ার চুক্তি হয় মৌখিকভাবে। ফলে মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব বেঁধে যায়। এখন সচেতন ভাড়াটিয়া এবং বাসা মালিককরা ভাড়ার জন্য লিখিত চুক্তি করেন। যেখানে ভাড়া সম্পর্কিত যাবতীয় শর্ত ও সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ থাকে।
বিজ্ঞাপন
চুক্তিপত্রটি উভয়পক্ষ কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রস্তুত করা হয়। যেখানে তিনজন সাক্ষী থাকতে হয়। চুক্তিটি হতে হয় ১০০ বা ৩০০ টাকার করে তিনটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। চুক্তিপত্রটি তিন পৃষ্ঠার বেশি হলে কার্টিজ পেপার সংযুক্ত করতে পারেন চুক্তিকারীরা। চুক্তিপত্রের মূল কপি থাকবে ভাড়াটিয়ার কাছে আর মালিকপক্ষের কাছে থাকবে হুবহু ফটোকপি। তবে প্রয়োজনে চুক্তিটির দুই সেট মূল কপি করে উভয়পক্ষের কাছে রাখতে পারে। চুক্তিনামায় তফসিল পরিচয় থাকতে হবে এবং একটি অনুচ্ছেদে চুক্তিটি কত পাতায় লেখা, হাতে না কম্পোজকৃত এবং সাক্ষী কয়জন, মূলকপি কয়টি তা কার কাছে থাকবে উল্লেখ থাকতে হয়।
ভাড়ার উদ্দেশ্য, ভাড়ার সময়সীমা, ভাড়ার পরিমাণ ও পরিশোধ পদ্ধতি, ভাড়া বাড়ানো, কত টাকা অগ্রিম দিতে হবে, কমন স্পেস ব্যবহারের শর্ত, হস্তান্তরযোগ্যতা, ভাড়া বাতিল, বাসা ছেড়ে দেওয়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলো উল্লেখ থাকতে হয় বাড়িভাড়া চুক্তিতে।
বিজ্ঞাপন
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন
বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে এবং বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১’-এ, যা উভয়পক্ষের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা-৭ মতে, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মতের অধিক হলে তা কোনোভাবেই আদায়যোগ্য হবে না। ‘মানসম্মত’ বলতে যৌক্তিক ও উপযুক্ত ভাড়ার কথা বলা হয়েছে। ১৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজারমূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না।
এই আইনে সব বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াকে ভাড়ার বিপরীতে লিখিত রসিদ দিতে বাধ্য। এই রসিদ নির্ধারিত ফরমে সই করে ভাড়াটিয়াকে দিতে হবে। রসিদ সম্পন্ন করার দায়দায়িত্ব বাড়িওয়ালার। রসিদ দিতে ব্যর্থ হলে ভাড়াটিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে বাড়িওয়ালা আদায়কৃত টাকার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আরও পড়ুন
চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করে থাকলে ভাড়াটিয়াকে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করা যাবে না। চুক্তিপত্র না থাকলে যদি কোনো ভাড়াটিয়া প্রতি মাসের ভাড়া পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করেন তাহলেও ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না। যুক্তিসঙ্গত কারণে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করতে চাইলে যদি মাসিক ভাড়ায় কেউ থাকেন সেক্ষেত্রে ১৫ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে। ভাড়াটিয়া নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করা অবস্থায় যদি বাড়িওয়ালা তাকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেন তাহলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার ভাড়াটিয়ার রয়েছে।
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে, মানসম্মত ভাড়া কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে দুই বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। দুই বছর পর মানসম্মত ভাড়ার পরিবর্তন করা যাবে।
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বাড়ি মালিক তার বাড়ি বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনত বাধ্য। বাড়ির মালিক ইচ্ছা করলেই ভাড়াটিয়াকে বসবাসের অনুপযোগী বা অযোগ্য অবস্থায় রাখতে পারে না। ভাড়াটিয়াকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করতে হবে।
এএসএস/এমএ