সেদিন স্কুলে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী অভিভাবকের অপেক্ষায় ছিল

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান যে স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হয় সেখানে সেদিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। ক্লাস শেষে কেউ কেউ অভিভাবকের জন্য অপেক্ষা করছিল, কেউ নিজেই বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটে দুর্ঘটনা।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
মাইলস্টোন অধ্যক্ষ বলেন, গত ২১ জুলাই আনুমানিক বেলা ১টা ১২ মিনিট থেকে ১টা ১৪ মিনিটের মধ্যে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দিয়াবাড়ি স্থায়ী ক্যাম্পাসে একটি দোতলা ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। বেলা ১টায় স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় তখন অভিভাবকদের জন্য শুধু স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী অপেক্ষারত অবস্থায় ছিল। তখন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
আরও পড়ুন
ঘটনার আকস্মিতায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ হতবিহ্বল ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে মুহূর্তের মধ্যে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও এলাকাবাসী উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ ও র্যাবের প্রশিক্ষিত জনবল সম্মিলিতভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেন।
অধ্যক্ষ জানান, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমাদের স্কুল শাখার ১৮ জন শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক, ২ জন অভিভাবক মৃত্যুবরণ করেন। এ দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হন ৫১ জন। এদের মধ্যে ৪০ শিক্ষার্থী, ৭ জন শিক্ষক, ১ জন অভিভাবক, ১ জন আয়া ও ১ জন পিয়ন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে ৫ জন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ৩ জন শিক্ষার্থী ও ২ জন অভিভাবক।
এ ঘটনায় ২২ জুলাই এ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ শুধু এ প্রতিষ্ঠানে নিহত, আহত ও নিখোঁজের তথ্য তুলে ধরছে। কর্তৃপক্ষের তথ্য হালনাগাদকরণের কাজ চলমান। এই দুঃখজনক ঘটনায় হতাহতের সর্বমোট সংখ্যা তুলে ধরছে আইএসপিআর।
তিনি বলেন, হৃদয়বিদারক এ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের শোকাহত সদস্যদের প্রতি আমরা গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের চিকিৎসাসহ সব প্রয়োজনে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ সবর্দা পাশে রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থী ও সন্তান হারানোর এই চরম শোকসন্তপ্ত অবস্থায় পুরো জাতি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। প্রত্যেকেই তাদের অবস্থান থেকে সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গুরুতরভাবে আহতদের উন্নত ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এ ব্যাপারে চিকিৎসা ও সেবাকার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য একটি জরুরি সেল গঠন করেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।
একইসঙ্গে দুর্ঘটনার প্রথম থেকে এ পর্যন্ত উদ্ধার, যোগাযোগ, সেবা, চিকিৎসাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা মানবিকতার হাত বাড়িয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
আরএইচটি/এমএসএ