নুসরাতের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাতেন স্বামী মিল্লাত

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সংসদ সচিবালয়ের কোয়ার্টারে থেকে নুসরাত জাহান (২৭) নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এখনও পলাতক রয়েছেন তার স্বামী মামুন মিল্লাত। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, মিল্লাতের কারণে নুসরাত আত্মহত্যা করেছে। তাই মিল্লাতকে খুঁজছে পুলিশ। তাকে হাতে পেলেই নুসরাতের আত্মহত্যার পেছনের বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে বলে মনে করছে ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ।
শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি এলাকার বাসিন্দা নিবেদিতা রোজারিও ধর্মান্তরিত হয়ে মিল্লাতকে বিয়ে করেন। বিয়ের আগে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের সময় মিল্লাত নুসরাতকে বলেছিল সে (মিল্লাত) বিসিএস ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তা। আর সেই পরিচয়েই বিয়ের পর সংসদ সচিবালয়ের কোয়ার্টারে বাসা ভাড়া নেয় মিল্লাত।
জানা যায়, বিয়ের পর কিছুদিন তাদের দাম্পত্য জীবন সুখে কাটলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় দিলেও মিল্লাতের আচরণ সন্দেহজনক মনে হতে শুরু করে নুসরাতের কাছে। মিল্লাত অফিসে কেন যায় না, পুলিশের কাজ কর্ম নিয়ে নানা বিষয়ে নুসরাত তার কাছে জানতে চাইত। কিন্তু এসব কথা যথারীতি এড়িয়ে যেত মিল্লাত। পরে এক সময় তাদের পরিবারে অর্থ সংকটও দেখা দেয়। এরপর থেকে নিয়মিত তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হতে থাকে।
থানা সূত্রে আরও জানা যায়, নুসরাতের আত্মহত্যার চার-পাঁচ মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ আরও বেড়ে যায়। সেই সময় মিল্লাত নুসরাতকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালাত। প্রায়ই মিল্লাত নুসরাতকে মারধর করত। মিল্লাতের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নুসরাত এসব কথা তার বন্ধুবান্ধব ও পরিবার-পরিজনকে জানিয়েছিল একাধিকবার।
নুসরাতের মৃত্যুর বিষয়ে রোববার (১৩) দুপুরে সর্বশেষ তথ্য ঢাকা পোস্টকে জানান শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি।
তিনি বলেন, নুসরাতের পরিবারের লোকজন থানায় এসেছে। নুসরাতের বাবা বাদী হয়ে মিল্লাতের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা করছেন। মামলাটি এখনও লেখা শেষ হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ওসি আরও বলেন, মিল্লাত পুলিশ কর্মকর্তা নয়। সে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নুসরাতকে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর সে নুসরাতকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করত। প্রতারণার শিকার হয়ে এবং প্রতিনিয়ত নির্যাতনের কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে নুসরাত। আর সে কারণেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত হয়ত নুসরাত নিয়েছে। আমরা মিল্লাতকে গ্রেফতারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি তাকে দ্রুত গ্রেফতার করা যাবে।
শনিবার (১২ জুন) দুপুরে সংসদ সচিবালয় কোয়ার্টারের একটি বাসার প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করেও নুসরাতের কোনো সাড়া পাননি। এসময় প্রতিবেশীরা বিষয়টি পুলিশকে ফোন করে জানায়। দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশের একটি টিম এসে বাসার দরজা ভেঙে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় নুসরাতের মরদেহ দেখতে পায়। পরে নুসরাতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এ বিষয়ে শনিবার শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি সাংবাদিকদের জানান, নুসরাত আর মিল্লাত সচিবালয় কোয়ার্টারের একটি বাসায় সাবলেট থাকত। নুসরাতের বাড়ি খাগড়াছড়িতে। সে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মেয়ে নুসরাত ২০১৯ সালে ধর্মান্তরিত হয়ে মামুন মিল্লাতকে বিয়ে করেন। বিয়ের আগে তার নাম ছিল নিবেদিতা রোজারিও।
এমএসি/এসএসএইচ