আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের বাইরে সংঘর্ষ : এইচআর হেডসহ আহত ২০

চাকুরিচ্যুত কর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এইচআর হেডসহ আহত হয়েছেন ১৫ জন। এ সময় ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডদের লাঠিচার্জে পাঁচজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৪টায় দৈনিকবাংলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত সিকিউরিটি গার্ড শাহিনুরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এইচআর হেড আমির হোসেনকে ভর্তি করা হয়েছে স্কয়ার হাসপাতালে। হামলাকারীদের হাত থেকে ব্যাংকের তিনজন ডিএমডিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ‘আহত অবস্থায় নারীসহ পাঁচজন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জরুরি বিভাগে এসেছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা চলে যান। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।’
ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীদের লাঠিচার্জে আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন মো. নিশাদ (২৬), আরিফা আক্তার (২৮), মুক্তা বেগম (৩২), নাঈম উদ্দিন (৩০) ও রেজাউল করিম (৩০)।
এদিকে আল-আরাফাহ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, সংঘর্ষে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- এইচআর হেড আমির হোসেন, সিকিউরিটি গার্ড শাহিনুর, লিটন (২৫), ইলিয়াস (৩৮), ফাহিম (১৯), রকি হোসেন (২৬), তোফায়েল (৩২), নুর আলম (৪২), আরিফ (২৫), জাকির হোসেন (২৫), সাগর (২৯), লুৎফর, ফারুক ও সোহেল।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, টানা ৮ কার্যদিবস আন্দোলনকারীরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। এ ব্যাপারে পল্টন থানায় মামলা দায়ের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। আন্দোলনের নামে বল প্রয়োগ করে গত ৮ কর্মদিবস কার্যত অচল করে রাখা হয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়। কয়েকদিন ধরে আল-আরাফাহ টাওয়ারে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করার জন্য পার্শ্ববর্তী সুরমা টাওয়ারে বসার ব্যবস্থা করা হয়।
পরে বিকেল ৪টায় ব্যাংকের তিনজন ডিএমডি ও এইচআর হেড আমির হোসেনসহ কয়েকজন সুরমা টাওয়ার থেকে নেমে গাড়িতে উঠছিলেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা ছুটে এসে তাদের গাড়ি ঘিরে ধরেন এবং এইচআর হেড আমির হোসেনকে বেধড়ক মারধর করেন। তাদের উদ্ধার করতে ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডরা ছুটে এলে তাদেরকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। কয়েকশ হামলাকারী লাঠি নিয়ে নিয়ে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত করে।
সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়ম না মেনে নিয়োগ এবং চাহিদার তুলনায় বেশি নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এমনকি ৬ শতাধিক কর্মকর্তার নিয়োগ দেওয়া হয় সরাসরি তৎকালীন চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে। যার অনুমোদন নেওয়া হয়নি ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকেও।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন তদারক সংস্থার তদন্তে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন অসংগতি সামনে চলে আসে। বিষয়টি নিয়মের মধ্যে আনার লক্ষ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর অংশ হিসেবে চিহ্নিত ১৪১৪ কর্মকর্তার মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর মধ্যে অকৃতকার্য ৫৪৭ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এই চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা গত ২৮ জুলাই সকালে আকস্মিক আল-আরাফাহ ইসলামী বাংকের হেড অফিসের প্রবেশমুখে জড়ো হয়ে মানবঢাল তৈরি করে এবং মারমুখি আচরণ করতে থাকে। এরপর গত ৮ দিন ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা একইভাবে প্রধান গেট বন্ধ করে রেখেছে।
ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, চাকরিচ্যুতরা আমাদের কাউকে অফিস করতে দিচ্ছে না। তারা বল প্রয়োগ করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। শত-শত কর্মীর কর্মক্ষেত্রকে তারা ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন না করে গুরুতর অপরাধ করা হচ্ছে।
চাকরিচ্যুতদের দাবি, তাদের কোনো নোটিশ না দিয়ে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চাকরি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ঘোষণা দিয়ে তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। যথাযথ বিধান মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো রকম বিতর্ক তোলার সুযোগ নেই। এ সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি রাষ্ট্র সম্পৃক্ত। এখানে ব্যাংক কতৃপক্ষের এককভাবে কিছু করার নেই।
এসএএ/এআর/এমজে