স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন চায় বিবিএসের ৯৬ শতাংশ জনবল

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন হিসেবে দেখতে চায় সংস্থাটির ৯৬.১৫ শতাংশ জনবল। এ লক্ষ্যে বিবিএসে কর্মরতদের চারটি বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বৈঠক করে এ আহ্বান জানায়।
এ প্রসঙ্গে পরিসংখ্যান সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ টাস্ক ফোর্সের সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর উৎপাদিত পরিসংখ্যানের গুণগতমান, স্বচ্ছতা ও প্রাপ্যতা পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালীকরণের জন্য সুপারিশ দিতে কাজ করছে টাস্কফোর্স। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার ডেটলাইন রয়েছে। আমরা এর মধ্যেই জমা দেব। সেখানে স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের বিষয়টি থাকবে। আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি, এটি গঠন করলে কি ধরনের সুবিধা হবে, কীভাবে গঠন করতে হবে বা কোন প্রক্রিয়ায় এটি গঠিত হবে এসব নানা বিষয়। আমাদের সুপারিশে বিস্তারিত থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঐক্যবদ্ধ হওয়া সংগঠনের মধ্যে রয়েছে বিবিএস কর্মচারী কেন্দ্রীয় পরিষদ। এটির মোট অনুমোদিত জনবল রয়েছে ৩ হাজার ৭৭৪ জন, যা মোট জনবলের ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া বিবিএস দ্বিতীয় শ্রেণি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের জনবল ১২৪ জন, যা মোট জনবলের ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এসআইডি-বিবিএস আইটি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন জনের জনবল ২৯ জন, যা মোট জনবলের শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। বিবিএস নন-ক্যাডার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের জনবল ২৬১ জন, যা মোট জনবলের শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। এই চার সংগঠনের মোট জনবল হচ্ছে ৪ হাজার ৩৫৮ জন। বিবিএসের মোট জনবল হলো ৪ হাজার ৩৫৮ জন। ফলে মোট জনবলের ৯৬ দশমিক ১৫ শতাংশ জনবলই স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের পক্ষে রয়েছেন।
আরও পড়ুন
বিবিএস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের মাধ্যমে দেশের তথ্য ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে হবে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুশাসন ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিবিএসের কাঠামোগত রূপান্তরের পক্ষে সুস্পষ্ট সুপারিশ করেছে।
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদনে (অধ্যায় ২২.৫, পৃষ্ঠা ৩৯০) এ প্রস্তাব করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, তথ্য কারসাজির বিষয়ে উদ্বেগ দূর করতে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্যের অখণ্ডতা বৃদ্ধির জন্য বিবিএসকে একটি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশনে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। যেটি সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে। একইভাবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে (সুপারিশ ৬.৯, পৃষ্ঠা-৯২ ও পরিশিষ্ট ৮, পৃষ্ঠা-১৯৫) বিবিএসকে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও নিজস্ব জনবল নিয়োগ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিশনে রূপান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। যেখানে ‘ক্যাডার সার্ভিস’ প্রযোজ্য নয় বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে জাতীয় সংসদের প্রতি জবাবদিহিমূলক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবগুলোর প্রতি বিবিএসের ৯৬ শতাংশের বেশি জনবলের প্রতিনিধিত্বকারী চারটি সংগঠন পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে ঐক্য পরিষদের এক নেতা বলেন, একটি স্বাধীন ও পেশাদার পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের মাধ্যমে সরকারের নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মূল্যায়নের ভিত্তি আরও মজবুত হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। কর্মরতদের প্রাণের দাবি, স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হোক। ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইন বা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে একটি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশনে রূপান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা হোক।
এসআর/এসএসএইচ