অর্থায়ন ঘাটতিতে বাধায় বাংলাদেশের জলবায়ু হ্রাস

বাংলাদেশের পাঁচগুণ বেশি কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক অর্থায়নের ঘাটতির কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এনডিসি ২.০ বাস্তবায়নের আওতায় শর্তসাপেক্ষ লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে মাত্র ১.২৫ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে। গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ বলছে, উন্নত দেশগুলো সময়মতো প্রতিশ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিত করলে আসন্ন এনডিসি ৩.০-এর মাধ্যমে দেশের কার্বন হ্রাস লক্ষ্য সহজেই অর্জন করা সম্ভব। না হলে শর্তসাপেক্ষ হ্রাসের পূর্ণ সম্ভাবনা হারিয়ে যাবে এবং জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা ফলাফলে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ প্যারিস চুক্তির অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৫ শতাংশ কমানোর অঙ্গীকার করেছিল। ২০২১ সালে এনডিসি ২.০-তে আনকন্ডিশনাল লক্ষ্য বাড়িয়ে ৬.৭৩ শতাংশ এবং কন্ডিশনাল লক্ষ্য ২১.৮৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আনকন্ডিশনাল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯ শতাংশ ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে। কিন্তু শর্তসাপেক্ষ লক্ষ্য পূরণে আন্তর্জাতিক অর্থায়নের ঘাটতি সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষকরা জানিয়েছেন, এনডিসি ৩.০ বাস্তবায়নে আনকন্ডিশনালভাবে ৩৯.৫৮ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা সম্ভব। কিন্তু কন্ডিশনালভাবে ১১৬.৩৫ মিলিয়ন টন হ্রাস করতে হলে ২৭০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। বর্তমান অবস্থায় মাত্র ১.২৫ শতাংশ অর্থায়ন পাওয়া গেছে। অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষ হ্রাসের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন এখনো দুষ্প্রাপ্য।
আরও পড়ুন
প্রতিবেদনে শক্তি ও বিদ্যুৎ খাত, শিল্প, কৃষি ও বনায়ন, নগর ও পরিবহন খাতের বিস্তারিত বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। শক্তি খাতে নতুন নবায়নযোগ্য শক্তির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কন্ডিশনাল লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজন ২৪,১০৬ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি। বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী, নিঃসরণ ৯৫.১৪ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ১০৮.৮৭ মিলিয়ন টন হতে পারে। এক্ষেত্রে আনকন্ডিশনালভাবে ১১.৩২ মিলিয়ন টন এবং কন্ডিশনালভাবে ৫৮.২৭ মিলিয়ন টন হ্রাস সম্ভব।
শিল্প খাতে স্টিল ফার্নেস উন্নয়ন ও সার-সিমেন্ট শিল্পে নির্ধারিত পদক্ষেপ গ্রহণে প্রায় ৩.০৯ মিলিয়ন টন কার্বন হ্রাস সম্ভব। কৃষি, বন ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধার ও সমন্বিত কৃষি-বনায়ন কার্যক্রম চালু করলে ব্লু কার্বন ক্রেডিটের মাধ্যমে প্রতি টন ৭৫ থেকে ৯০ ডলার পর্যন্ত রাজস্ব অর্জন সম্ভব।
নগর ব্যবস্থায় ঢাকায় এসি তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস করলে বিদ্যুৎ চাহিদা কমবে ৪,৩০২ মেগাওয়াট। সবুজ এলাকা বৃদ্ধি করলে শীতলীকরণ চাহিদা ৫-১৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। পরিবহন খাতে দেশের জ্বালানি নিঃসরণের ৮.৮৬ শতাংশ আসে। বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানো, চার্জিং স্টেশন স্থাপন এবং প্রণোদনা কার্যক্রম বাড়ানো হলে পরিবহন খাতেও নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দূষণ কমানো ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। তবে কার্যকর আইন প্রয়োগ ও কাঠামোগত সমন্বয় না থাকায় এখনো যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, শর্তসাপেক্ষ অর্থায়ন শুধু বাজেটের হিসাব নয়। এটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ ও পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রতি উন্নত দেশগুলোর অঙ্গীকার পূরণ না করা তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অর্থায়ন নিশ্চিত করা, তদারকি ও সমন্বয় শক্তিশালী করা, রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন বৃদ্ধি, নগর পরিকল্পনা ও নাগরিক আচরণকে জলবায়ু নীতির সঙ্গে যুক্ত করা এবং উচ্চ সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এনডিসি ৩.০-এর লক্ষ্য অর্জন প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য পূরণের জন্যও অপরিহার্য।
টিআই/এসএসএইচ