বাংলাদেশ এফএওর কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। তিন বছর মেয়াদে আগামী বছর থেকে এ দায়িত্ব পালন শুরু করবে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ইতালির রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, ১৮৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে চলমান ৪২তম এফএও কনফারেন্সে বাংলাদেশ সর্বসম্মতিতে এ সদস্যপদ অর্জন করে। ২০২২-২০২৪ মেয়াদে বাংলাদেশ সদস্য পদের দায়িত্ব পালন করবে।
দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করা হয়, সদস্যপদ অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অন্যান্য কাউন্সিল সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে নীতি ও নির্বাহী পর্যায়ে এফএওর কার্যক্রম, বাজেট বাস্তবায়ন, ফলাফল ভিত্তিক কাঠামোর আওতায় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণসহ এর প্রশাসনিক দিকগুলো তদারকিতে নেতৃত্ব দেবে। এজন্য সমর্থন আদায়ে রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশ এমন এক সময় এ সদস্যপদ লাভ করল যখন ঢাকায় ৩৬তম এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এফএও আঞ্চলিক সম্মেলন (এপিআরসি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলন (৮-১১ মার্চ ২০২২) উদ্বোধন করবেন। যেখানে ৪৬টি দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
রোমের এফএও সদর দফতরে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে চলমান এফএও কনফারেন্সে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক আট সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং অন্যান্যদের মধ্যে আছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও এফএও-তে স্থায়ী প্রতিনিধি মো. শামীম আহসান।
স্টেট অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অংশের ভাষণে বাংলাদেশ খাদ্য ও কৃষিতে অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির উন্নয়নে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০ বছর আগে ১৯৯৯-২০০০ সালে এ সরকারের আগের আমলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে ও বর্তমান সরকার এ আমলেও তা ধরে রেখেছে। মাথাপিছু আয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে এবং দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। ফলে খাদ্যে মানুষের প্রবেশযোগ্যতা সহজতর হয়েছে। এছাড়া, বিগত দশকে অপুষ্টি দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, চলমান কোভিড-১৯ এর শুরুতেই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, সরবরাহ অব্যাহত রাখা ও দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনতে নানামুখী প্রণোদনা দেন। এছাড়া, কৃষি খাতে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। ফলে কোভিড পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও নির্দেশনায় দেশে কৃষির উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহের ধারা অব্যাহত থাকে এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ ১১ লাখ রোহিঙ্গাও বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
এপিআরসি পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে মন্ত্রী খাদ্য ও কৃষিতে কোভিডের প্রভাব মোকাবেলায় সমন্বিত কর্মসূচি নিয়ে এফএওকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, টেকসই ও পুষ্টিসম্মত খাদ্য ব্যবস্থা, ডিজিটাল উদ্ভাবন, জলবায়ুঘাত সহনশীল প্রযুক্তি, খাদ্য অপচয় হ্রাস ও নিরাপদ খাদ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এফএওর সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
এছাড়া, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পানি স্বল্পতা ও পানি সমস্যা নিরসনের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান মন্ত্রী। পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও বণ্টনের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মিলিত সংগঠন/প্লাটফর্ম গঠনেরও প্রস্তাব করেন তিনি।
এনআই/একে/এসকেডি