রিয়েল এস্টেট খাতে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে

বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট খাত দ্রুত বিকাশমান হলেও এখনো রয়ে গেছে নানা চ্যালেঞ্জ। সরকারি অনুমোদনের জটিলতা, উচ্চ ট্যাক্স ও রেজিস্ট্রেশন ব্যয়, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং ব্যাংক সুদের উচ্চ হার খাতটির অগ্রযাত্রায় বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
ফিজিবিলিটি থেকে হ্যান্ডওভার পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও একীভূত নীতি প্রয়োগ করলে খাতটি দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় অবদান রাখতে পারবে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাঁটাবনে দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ডিবিসি প্রোএক্সচেঞ্জ ক্রস-সেক্টর লার্নিং হাব– রিয়েল এস্টেট ও বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল বিষয়ক ব্যবসায়িক প্রেজেন্টেশন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অপারেশন) মোহাম্মদ তানভীরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট খাত ১৯৮০-এর দশক থেকে গড়ে উঠতে শুরু করে এবং আজ এটি দেশের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ইস্টার্ন হাউজিং এই খাতের পথিকৃৎ, পরে অ্যাডভান্স ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজি ও অ্যাসেট ডেভেলপমেন্টের মতো প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট কাঠামোর ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ হাজার ৪০০টির বেশি কোম্পানি রিয়েল এস্টেট খাতে কাজ করছে, যা দেশের জিডিপিতে প্রায় ১৮ শতাংশ অবদান রাখছে। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে বাসস্থান থাকায় এই খাতের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, একটি প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে ফিজিবিলিটি স্টাডি, ডিজাইন ম্যানেজমেন্ট, অনুমোদন, নির্মাণ এবং হ্যান্ডওভার থেকে দক্ষ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। তবে এই খাতকে এগিয়ে নিতে এখনো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। যেমন সরকারি অনুমোদনের জটিলতা, উচ্চ ট্যাক্স ও রেজিস্ট্রেশন ব্যয়, নির্মাণ সামগ্রীর দামবৃদ্ধি, ব্যাংক সুদের উচ্চ হার এবং কিছু প্রতিষ্ঠানের অস্বচ্ছতা।
তানভীরুল ইসলাম বলেন, রিয়েল এস্টেটের জন্য একটি একীভূত নীতি, স্বচ্ছতা, পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনা নিশ্চিত করা গেলে এই খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও বড় অবদান রাখবে এবং দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
এডিসন রিয়েল এস্টেটের অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, রিয়েল এস্টেট উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপে জমি নির্বাচন করা হয়। যা জয়েন্ট ভেঞ্চার, ওনল্যান্ড বা শেয়ার ফর্মের মাধ্যমে হতে পারে। এরপর আর্কিটেকচারাল কনসেপ্ট থেকে শুরু করে স্ট্রাকচারাল, ইলেকট্রিক্যাল ও প্লাম্বিং ডিজাইন পর্যন্ত ধাপে ধাপে কাজ এগোয়। প্রতিটি স্তরে সমন্বয়ের অভাব প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, এছাড়া কস্ট ম্যানেজমেন্ট একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যেখানে উপকরণ, এলসি, ট্যাক্স ও নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে খরচ কমানোর সুযোগ রয়েছে। টাইম, কস্ট, কোয়ালিটি ও সেফটি—এই চারটি বিষয়েই প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করে। ফায়ার সেফটি ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করাও মানবজীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন— আইসিএমএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. কাউসার আলম, আইসিএমএবির প্যাট্রন ও চেয়ারম্যান এস এম শাওন মাহমুদ, প্রোএক্সচেঞ্জ লার্নিং হাবের মডারেটর ও চেয়ারম্যান মো. মোকলেসুর রহমান, র্যাংস প্রপার্টিজ লিমিটেডের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট হেড আবদুল্লাহ আল ফারাবি, নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের এজিএম (ফাইন্যান্স ও অ্যাকাউন্টস) সাজেদুল হক।
সেমিনারে মূলত রিয়েল এস্টেট ব্যবসার কৌশলগত পরিচিতি, বিক্রয়, মার্কেটিং ও কাস্টমার সার্ভিস, নৈতিকতা, বিশ্বাস ও সেবা; কনস্ট্রাকশন, কমপ্লায়েন্স ও নিরাপত্তা; অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে তুলনা ও চ্যালেঞ্জ; বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা; খরচ, মূল্য নির্ধারণ ও অ্যাকাউন্টিং এবং কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টসের ভূমিকা ও সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এমএইচএন/এমএন