উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ৬৫ ভাগই বিক্রি করে দেন কৃষক

দেশের কৃষক তাদের উৎপাদিত খাদ্যশস্যের প্রায় ৬৫ ভাগই বিক্রি করে দেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
সোমবার (২১ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘কৃষি পণ্যের স্থুল বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত জরিপ ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ। ১৫০ ধরনের উৎপাদিত পণ্যের তথ্যেও ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের সবটুকু বাজারে বিক্রি করেন না। পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পর অবশিষ্ট কৃষিপণ্য কৃষক বাজারে বিক্রি করে থাকেন। উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মধ্যে বাজারে বিক্রি করা কৃষিপণ্যের প্রকৃত পরিমাণকে স্থুল বিপণিত উদ্বৃত্ত বলা হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতিতে শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিও অনেকাংশে বিপণিত উদ্বৃত্তের ওপর নির্ভরশীল। বিপণিত উদ্বৃত্ত যদি অপর্যাপ্ত হয়, তাহলে দেশটি আমদানি করতে বাধ্য হয়, যা সরাসরি কোনো দেশের বাণিজ্যের ভারসাম্য নষ্ট করে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের কৃষকরা খাদ্যশস্য (ধান, গম, বার্লি, কাওন ইত্যাদি) উৎপাদন করেন পাঁচ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার ২৪৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে তারা নিজেদের খাবারের জন্য ব্যবহার করেন দুই কোটি পাঁচ লাখ ৯০ হাজার ৮০৮ মেট্রিক টন, যার হার মোট উৎপাদনের ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। বাকি তিন কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিক্রি বা বাজারজাত করেন। যার হার ৬৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
দেশে কৃষকদের ডাল জাতীয় পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ তিন লাখ ৮০ হাজার ৫০৮ মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্ত থাকে বা নিজের প্রয়োজন মেটানোর পর কৃষক বাজারে বিক্রি করেন তিন লাখ ৮ হাজার ৬০৩ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ডাল জাতীয় পণ্যের ৮১ দশমিক ১০ শতাংশ বাজারে বিক্রি করেন কৃষক।
তৈল বীজ উৎপাদনের পরিমাণ ১০ লাখ ২১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্ত থাকে ৮ লাখ ৪ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন (৭৮ দশমিক ৮০ শতাংশ)। তন্তু উৎপাদনের পরিমাণ ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৬৬৮ মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬ মেট্রিক টন (৯৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ)।
সবজি উৎপাদনের পরিমাণ এক কোটি ২৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৯১ মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ৯০ লাখ ৩১ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন (৭০ দশমিক ০১ শতাংশ)। শাক উৎপাদনের পরিমাণ তিন লাখ ৪০৬ মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দুই লাখ ৩১ হাজার ৮৯৬ মেট্রিক টন (৭৭ দশমিক ১৯ শতাংশ)। মশলা উৎপাদনের পরিমাণ ২৫ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ২২ লাখ ৩১ হাজার ১০১ মেট্রিক টন (৮৬.২৮ শতাংশ)। ফল উৎপাদনের পরিমাণ ৪৭ লাখ ৮১ হাজার ১৯৩ মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ৩৮ লাখ ১৬ হাজার ৩৯৬ মেট্রিক টন (৭৯ দশমিক ৮২ শতাংশ)।
তামাক উৎপাদনের পরিমাণ ৮৯ হাজার ২৭৪ মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ৮৭ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন (৯৮ দশমিক ২৪ শতাংশ)। পান উৎপাদনের পরিমাণ দুই লাখ ১৪ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দুই লাখ ১২ হাজার ৮৪৪ মেট্রিক টন (৯৯ দশমিক ২৪ শতাংশ)। সুপারি উৎপাদনের পরিমাণ দুই লাখ ১৫ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ এক লাখ ৮৪ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন (৮৫ দশমিক ৪২ শতাংশ)। গো-খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ দুই লাখ ৪২ হাজার ৮৭ মেট্রিক টন। তার মধ্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ৪১ হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন (১৭ দশমিক ০৫ শতাংশ)।
জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী। এতে বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শশাঙ্ক শেখর ভৌমিক, মেসবাহুল আলম এবং সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম।
এসআর/আরএইচ