শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা দুর্বল আইন, শক্তিশালীকরণের দাবি

বাংলাদেশে এখনও অর্ধেকের বেশি মানুষ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের বাইরে। সরকারের অঙ্গীকার থাকলেও আইনগত সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবায়নের ঘাটতিই প্রধান বাধা– এমন মত উঠে এসেছে দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায়।
বক্তারা বলেন, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিবন্ধনের দায়িত্ব অর্পণ এবং বিদ্যমান আইন শক্তিশালী করলেই শতভাগ নিবন্ধনের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
রাজধানীর বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন: অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় (৫ ও ৬ নভেম্বর) এসব মত তুলে ধরেন আলোচকরা। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)-এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) কর্মশালাটির আয়োজন করে। এতে প্রিন্ট, টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে কর্মরত ৩০ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও, বর্তমান আইনের দুর্বলতা ও বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা এ লক্ষ্য অর্জনের পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।
বক্তারা মনে করেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ সংশোধন করে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আইনি দায়িত্ব দিলে তা বাস্তব অগ্রগতি আনবে।
মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধনের হার ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার মাত্র ৪৭ শতাংশ। অথচ বৈশ্বিক গড় হার যথাক্রমে ৭৭ ও ৭৪ শতাংশ।
বক্তারা বলেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শুধু প্রশাসনিক তথ্য নয়, এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ভোটাধিকার, উত্তরাধিকার, এবং সামাজিক সুরক্ষাসহ রাষ্ট্রীয় সুবিধাগুলো নিশ্চিত হয়। অপরদিকে নিবন্ধনবিহীন নাগরিক শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ ও পরিচয়হীনতার ঝুঁকিতে থাকে।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমান আইনে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য প্রদানের দায়িত্ব পরিবারকে দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যসেবার ভূমিকা ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। অথচ দেশে প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু জন্মগ্রহণ করে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে।
বক্তারা বলেন, অনেক দেশ হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করে ইতোমধ্যেই প্রায় শতভাগ নিবন্ধন নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশেরও সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা প্রয়োজন।
জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এজন্য শুধু আইন সংস্কার নয়, আইনের কার্যকর বাস্তবায়নও সমান জরুরি।
ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নিবন্ধন কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানো, প্রযুক্তির ব্যবহার ও আন্ত-খাত সমন্বয় জোরদার করতে হবে।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন– ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. মঈন উদ্দিন, জনকণ্ঠের চিফ রিপোর্টার কাওসার রহমান এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা দেন প্রজ্ঞার কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার ও কোঅর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন।
বক্তারা বলেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শুধু পরিসংখ্যান নয়, এটি ন্যায্য উন্নয়ন পরিকল্পনা, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ভিত্তি। এজন্য সরকারের উচিত হবে আইনগত সংস্কার ও প্রশাসনিক উদ্যোগ একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া, যাতে প্রতিটি নাগরিকের পরিচয় রাষ্ট্রের নথিতে নিশ্চিত হয়।
টিআই/বিআরইউ