উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনো উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনো উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা বৈশ্বিক ন্যায়বিচার ও আস্থা—দুটোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ-৩০) উপলক্ষ্যে এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “উন্নত দেশগুলোর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ হয়নি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত অর্থ পাচ্ছে না। নতুন সমষ্টিগত পরিমাণগত লক্ষ্য নিয়েও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। উন্নত দেশগুলো প্রকৃত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ঋণ বা পুনঃবিনিয়োগের নামে অর্থায়ন দেখাচ্ছে, যা জলবায়ু ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
তিনি বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের বড় অংশই ঋণ আকারে দেওয়া হচ্ছে, অনুদান নয়। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো একদিকে জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন ঋণের বোঝা বইছে। নতুন তহবিল কাঠামোতে অন্তত ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান আকারে বরাদ্দ দিতে হবে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো বাস্তব অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করতে পারে।
জীবাশ্ম জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্ট স্বার্থ ও অনৈতিক প্রভাব নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরের পথে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিআইবি বলেছে,
“আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানির অনৈতিক প্রভাব রোধ না করা গেলে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ন্যায্য রূপান্তর নিশ্চিত করতে হলে এই হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।”
টিআইবি আরও বলছে, আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কপ-২৯ সম্মেলনে ১,৭৭০ জন জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্ট উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ৩৩৯ জন ছিলেন আনুষ্ঠানিক সরকারি প্রতিনিধি বা জাতীয় আলোচক হিসেবে নিবন্ধিত। তাদের সম্মেলনের মূল আলোচনা কক্ষ ও গোপন বৈঠকে বিশেষ প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল। এই লবিং প্রভাবের কারণেই বৈশ্বিক পর্যায়ে কয়লার ব্যবহার বন্ধ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং ‘নেট জিরো’ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
টিআইবি কপ-৩০ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেছে। যার মধ্যে রয়েছে-
• জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানির প্রতিনিধিদের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া।
• নিউ কালেকটিভ কোয়ান্টিফাইড গোল-এর আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অনুদান হিসেবে ন্যূনতম ৩০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা।
• ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ন্যায্য রূপান্তর ও নেট-জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ গ্রহণ।
• জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর ‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (IEPMP-2023)’ বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন।
• জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণসহ একটি স্বাধীন তদারকি কর্তৃপক্ষ গঠন।
আরএম/এনএফ