গ্রামীণফোনের ১৫৯ কর্মী ছাঁটাই

১৫৯ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে টেলিযোগাযোগ কোম্পানি গ্রামীণফোন। গত রোববার (২০ জুন) সন্ধ্যায় এক ই-মেইলে এসব কর্মীদের ছাঁটাইয়ের বিষয়টি জানায় কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২২ জুন) গ্রামীণফোনের কমিউনিকেশন শাখা এবং গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (জিপিইইউ) পক্ষ থেকে ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
সূত্র জানায়, গত রোববার (২০ জুন) সন্ধ্যায় গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ এক ই-মেইলের মাধ্যমে ১৫৯ জন কর্মীকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার কথা জানিয়ে দেয়। ছাঁটাই হওয়া ১৫৯ জন কর্মীর মধ্যে গ্রামীণফোন সেন্টারের কাস্টমার কেয়ারের ৩৯ জন এবং টেকনোলজি বিভাগের রিজিওনাল অপারেশন শাখার ১২০ জন রয়েছেন।
গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত কয়েক মাস ধরে পুনর্গঠনের নামে বিভিন্ন বিভাগের ১৬৭ জন কর্মীর কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরে ৮ জনকে রেখে অবশিষ্ট ১৫৯ জনকে ছাঁটাই করে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ।
গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক বলেন, এ ধরনের বেআইনি ছাঁটাই ইউনিয়ন কোনোভাবেই মেনে নেবে না। গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং অনতিবিলম্বে এই ১৫৯ জন কর্মীকে তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছে।
গ্রামীণফোনের বক্তব্য
গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে ঢাকা পোস্টকে বলা হয়, ছাঁটাই হওয়া ১৫৯ জনের মধ্যে আজ (২২ জুন) পর্যন্ত ৩০ জন আকর্ষণীয় ভিআরএস (স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প) নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সদয় দৃষ্টিতে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে মঙ্গলবার (২২ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টে একটি বিবৃতি পাঠায় গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনস মোহাম্মদ হাসান হোয়াটসঅ্যাপে বিবৃতিটি পাঠান। সেখানে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং অধিকতর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে যা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে সহায়তা করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের দায়িত্ব ও পরিধি পরিবর্তনশীল। সম্প্রতি গ্রামীণফোন ১৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মহীন এমন কিছু সংখ্যক কর্মীদের ছাঁটাই করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গ্রামীণফোন তার সব কর্মীদের বিষয়ে যত্নবান। এমনকি যারা গ্রামীণফোনের বাইরে ক্যারিয়ার তৈরির করতে চাইছেন তাদের বিষয়েও। কর্মীদের জন্য গ্রামীণফোন আকর্ষণীয় স্বেচ্ছা অবসর প্রণোদনা (ভিআরএস), পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য ও জীবনবিমা এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার সুবিধা দিয়ে থাকে। গ্রামীণফোন যথাযথ আইন অনুসরণ করে কর্মসংস্থানের শর্তাদি কঠোরভাবে রক্ষা করে।
গ্রামীণফোনের বাইরে নিজেদের নতুন কর্মপরিকল্পনায় যোগ দিতে ইতোমধ্যে নতুন ভিআরএস পরিকল্পনায় ১০০ কর্মী যুক্ত হয়েছেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছরও জুন মাসে কর্মীদের স্বেচ্ছা অবসরের প্রণোদনা দিয়েছিল গ্রামীণফোন। তবে সে সময় তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। কর্মহীন কর্মীদের জন্য এবারও অনেক সুবিধাসহ আবারও ভিআরএস ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। ১৭ জুন ভিআরএস আবেদনের সময় শেষ হয়।
ভিআরএসের আওতায় একজন কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুয়িটির বাইরে অতিরিক্ত চাকরির বয়স বিবেচনায় সর্বোচ্চ ১০০টি পর্যন্ত বেসিক পান।
স্বাস্থ্যবিমা : গ্রামীণফোনে কর্মরত অবস্থায় একজন কর্মী যে স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা পেতেন অবসরে যাওয়ার পরে পরবর্তী ২ বছর একই সুবিধা পাবেন। এই স্বাস্থ্যবিমার মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মীরা, তাদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও মা-বাবা ওপিডি ও আইপিডি সুবিধা পাবেন।
জীবন বিমা : এ বিমার আওতায় আগামী দুই বছরে মৃত্যুজনিত কারণে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পরিবারকে ২৪ মাসের মোট বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
ওপিডি ও আইপিডি : এর আওতায় অবসরে যাওয়া কর্মী, তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও মা-বাবা আগামী দুই বছর (যতবার হাসপাতালে ভর্তি হবেন) ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিমা সুবিধা পাবেন।
একে/এসকেডি/জেএস