৫৮ হাজার ভলান্টিয়ার, ২২০ সদস্যের স্পেশাল ফোর্স গড়েছে ফায়ার সার্ভিস

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবেই উচ্চ ভূমিকম্পপ্রবণ। তার ওপর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ভবনগুলোর ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় বড় মাত্রার ভূমিকম্পের পর অগ্নিকাণ্ডের প্রায় অবশ্যম্ভাবী এক ঝুঁকি রয়েছে, যা বহুলাংশে ক্ষয়ক্ষতি বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভবন নির্মাণে কাঠামোগত দুর্বলতা বা নির্মাণ কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ না করায় ঝুঁকি অনিবার্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সর্বশেষ দেশে গত ২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পসহ আরও কয়েকবার ছোট ছোট ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এ অবস্থায় ভূমিকম্প চলাকালে আতঙ্কিত না হতে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় চলতি বছরের মে মাসে অপারেশনাল বিভাগকে রাজধানীর মিরপুরে স্থানান্তর করেছে ফায়ার সার্ভিস। ঢাকায় ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগের যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেজন্য উদ্ধার সহায়তায় কুইক রেসপন্স করতে ৬০ সদস্যের স্পেশাল ফোর্স গড়া হয়েছে। ঢাকার বাইরেও প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০ জনের একটি করে স্পেশাল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা বিশেষভাবে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে উদ্ধার অভিযানের জন্য প্রশিক্ষিত।

এর বাইরে শুধু ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ মোকাবিলার স্বার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর ট্রেনিং ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগকে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে নেওয়া হচ্ছে।
বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হলে হতাহতদের উদ্ধার ও ভূমিকম্প-পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি আসলে কতটা- জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, অগ্নিকাণ্ড, বন্যাসহ যেকোনো দুর্যোগে প্রথম সাড়া দানকারী ও সম্মুখযোদ্ধা ফায়ার সার্ভিস। দুর্যোগ মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগকারী বাহিনীও ফায়ার সার্ভিস। বর্তমানে বড় মাত্রায় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। যদিও এর আগে বড় ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়নি বাংলাদেশ। তবে সর্বশেষ গত ২১ নভেম্বর ৫.৭ মাত্রার যে ভূমিকম্প হয়েছে সেটি আমাদের মনে ভয় ধরিয়েছে।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় ভূমিকম্প সংঘটিত হলে তা মোকাবিলা কিংবা সম্ভাব্য নেমে আসা দুর্যোগ শুধু ফায়ার সার্ভিসের একার পক্ষে মোকাবিলা সম্ভব নয়। এজন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার হবে। কারণ ভূমিকম্পের সঙ্গে সম্ভাব্য সবগুলো সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন ওয়াসা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সুয়ারেজ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভবন ধস ও মানুষ হতাহতের মতো বড় ঝুঁকি তৈরি করবে। সেটা মোকাবিলার জন্য সব প্রতিষ্ঠানেরই উচিত হবে এখন থেকে প্রস্তুতি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া।

অপারেশনাল টিম স্থানান্তর
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, ভূমিকম্প হলে আমরাও আক্রান্ত হতে পারি। উদ্ধারকারী অপারেশনাল টিম আক্রান্ত হলে উদ্ধার কাজ করবে কে? তাই কমান্ডিং ফোর্স হিসেবে অপারেশনাল টিমকে আলাদা করা হয়েছে। মিরপুরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ডিরেক্টর ট্রেনিং ও ডেভেলপমেন্টকেও আমরা পূর্বাচলে স্থানান্তর করছি, প্রক্রিয়া চলছে।
পূর্বাচলে প্রস্তুত ৬০ সদস্যের স্পেশাল কুইক রেসপন্স টিম
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, সারা দেশ থেকে বাছাই করা ফাইটারদের নিয়ে ৬০ জনের একটা স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। বড় ভূমিকম্প থেকে সুরক্ষা হিসেবে তাদের পূর্বাচলে রাখা হয়েছে। আমাদের স্পেশাল টিমটা প্রস্তুত মূলত বড় ধরনের আগুন, ভূমিকম্প দুর্যোগের জন্য। ভূমিকম্পে গ্যাস থেকে বিস্ফোরণও ঘটতে পারে। তখন যেন এই টিমটা দ্রুত রেসপন্স করতে পারে।
৮ বিভাগীয় শহরে ১৬০ জনের স্পেশাল টিম গঠন
এ ছাড়া ২০ জন করে আট বিভাগীয় শহরে মোট ১৬০ জনের স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। যদি ঢাকায় ভূমিকম্প হয়, তাহলে আশপাশের বিভাগের টিমগুলোকেও দ্রুত মুভ ও রেসপন্স করানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
তবে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, যদিও এসব পর্যাপ্ত নয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে। ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরের যে জনসংখ্যা সে তুলনায় ফায়ার সার্ভিসের জনবল, ইকুইপমেন্ট বা স্টেশন সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। ঢাকা শহরে যদি ভূমিকম্প হয়, দুর্যোগ তৈরি হয়, তাহলে কার্যকর ও দক্ষতার সঙ্গে যদি কাজ করতে চাই, তাহলে জনবল ইকুইপমেন্ট বা স্টেশন সংখ্যা বাড়াতে হবে। কারণ ভূমিকম্প হলে আমরা নিজেরাও তো ক্ষতিগ্রস্ত হব।

ভূমিকম্পের আগে, পরে ও ভূমিকম্পের সময় ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম, পরিকল্পনা ও পরামর্শ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভূমিকম্প এমন একটা দুর্যোগ যেটার আগে থেকে কোনোভাবেই সিগন্যাল পাওয়া যায় না। ভূমিকম্প যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় হতে পারে। এখন যে হয়েছে, আগামী ১০০ বছরে হবে না বা আগামী পাঁচ দিন পরে হবে না, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেকোনো সময় যেকোনো মাত্রায় ভূমিকম্প হতে পারে।
তিনি বলেন, রাজউকের ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের স্টাডিতে বলা হয়েছে, যদি ঢাকা শহরে ৭.৫ রিখটার স্কেল বা এর ওপরে ভূমিকম্প হয় তাহলে ৬ লাখের বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ মারা যাবে। ঢাকার এমন পরিস্থিতিতে দেখা যাবে এত বিপুল পরিমাণ বিল্ডিং যখন ভেঙে পড়বে তখন কিন্তু রেসকিউ অপারেশন করা, সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ করা খুবই ডিফিকাল্ট হয়ে যাবে। কারণ রাস্তাঘাট সব বন্ধ হয়ে যাবে, বৈদ্যুতিক ও গ্যাস লাইন বিচ্যুত হয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটবে। খুব বড় একটা ডিজাস্টার হবে।
ভূমিকম্পের সময় করণীয় ও সতর্কতামূলক পরামর্শ
পরামর্শ দিয়ে লে. কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার বলেন, এখন যেহেতু ভূমিকম্পের অগ্রিম কোনো বার্তা আমরা পাচ্ছি না, কোনো সংকেত পাচ্ছি না, যেটা করতে পারি সেটা হচ্ছে দুই ফেজের সচেতনতা ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। এক, অবশ্যই বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে কীভাবে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন বানানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।
‘এখন প্রশ্ন আছে যে, আমাদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৮/১০ লাখ ভবন তো ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এগুলো রেট্রোফিটিং (বিদ্যমান কাঠামো পরিবর্তন) করতে হবে। এগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ভূমিকম্প সহনীয় করতে হবে। আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে জড়িত ও সংশ্লিষ্ট তাদেরকে অবশ্যই এদিকে নজর দিতে হবে। ভূমিকম্প সহনীয় বিল্ডিং নির্মাণ বা রেট্রোফিটিংয়ের মাধ্যমে ভূমিকম্প সহনীয় বিল্ডিং তৈরি করতে হবে। এটা গেল প্রথম ইস্যু।’

দ্বিতীয়ত, মানুষের মধ্যে প্যানিক। যেহেতু ভূমিকম্প সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব কম। আমরা এটা সচরাচর ফেস করিনি। আমিও আমার জীবদ্দশায় এরকম ভূমিকম্প কখনো ফেস করিনি, এটাই প্রথম। সুতরাং আতঙ্ক তৈরি বা আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। প্যানিক যাতে না হয়, এর জন্য আমাদের অবশ্যই সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যারা হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে থাকেন ভূমিকম্পের সময় তাদের উচিত হবে প্যানিক না করে ভবনের যেকোনো বিম বা কলামের সংযোগস্থলে বা নিচে আশ্রয় নেবেন। কারণ ওই জায়গাটাই একটা বিল্ডিংয়ের সবচেয়ে মজবুত অংশ। সম্ভব হলে মাথার ওপরে বালিশ বা কুশন বা যদি সম্ভব হয় তোশক-কম্বল কিছু দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। যাতে উপর থেকে কিছু ভেঙে পড়লেও আঘাত প্রাপ্ত না হয়।
সবসময় রেডি রাখতে হবে খাবারসহ ‘ইমার্জেন্সি প্যাক’
লে. কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার বলেন, জরুরি সুরক্ষা হিসেবে শুকনা খাবার, পানির বোতল, কিছু এরকম ইমার্জেন্সি আইটেম, রেডিও, টর্চ লাইট, ব্যাটারি এগুলো ‘ইমার্জেন্সি প্যাক’ হিসেবে স্টোর করে রাখতে হবে। যদি আটকাও পড়ে যায় তাহলে যেন অন্তত ৪৮ বা ৭২ ঘণ্টা সাপোর্ট নিতে পারে।
‘যারা হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে দোতলা বা তিনতলায় থাকেন, তাদের পক্ষে সম্ভব হলে নেমে বাইরে খোলা জায়গায় চলে যেতে হবে। খোলা মাঠ বা এরকম জায়গায়, যেখানে ওপর দিয়ে ইলেকট্রিকের কেবল নেই বা বিল্ডিং ভেঙে পড়ার আশঙ্কা নেই, এরকম জায়গায়।’

সচেতনতায় ভূমিকম্পের ডকুমেন্টারি প্রচার
সচেতনতার জন্য ফায়ার সার্ভিস বিভিন্ন রকমের ডকুমেন্টারি প্রচার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভূমিকম্পের ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রচার করছি- ভূমিকম্পের আগে কী করতে হবে আর ভূমিকম্প হলে কী কী করণীয়, সে সম্পর্কে। এতে সাধারণ মানুষের একটা ধারণা হবে।
প্রশিক্ষণ দিয়ে ৫৮ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরি করেছে ফায়ার সার্ভিস
লে. কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার বলেন, বড় মাত্রায় হলে ভূমিকম্প ন্যাশনাল ডিজাস্টারে রূপ নেবে। তখন কিন্তু শুধু ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে একা মোকাবিলা বা উদ্ধার কার্যক্রম সম্ভব হবে না। তখন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দুর্ঘটনা মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য আমরা প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ার তৈরি করেছি, করছি। যারা আমাদেরকে হেল্প করবেন।
তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে ৫৮ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরি করা হয়েছে। যারা মোটামুটি ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের জন্য প্রশিক্ষিত।

উদ্ধারকারী দল-স্পেশাল ইকুইপমেন্ট ডিসেন্ট্রালাইজড করেছে ফায়ার সার্ভিস
ফায়ার সার্ভিসের এ পরিচালক বলেন, ভূমিকম্প হতেই পারে। ভূমিকম্প রিলেটেড যেসব ইকুইপমেন্ট দরকার সেগুলো আমাদের এক জায়গায় সেন্ট্রালি রাখা হতো। যেকোনো সময় যেহেতু ভূমিকম্প হতে পারে, আমরা এটা ডিসেন্ট্রালাইজড করেছি। আমাদের ইকুইপমেন্টগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছি, বিভিন্ন স্টেশনে ও পূর্বাচলেও রেখেছি। সিদ্দিকবাজার ও মিরপুরেও আছে। কারণ, যদি এক জায়গা অ্যাফেক্টেড হয় সঙ্গে সঙ্গে যেন অন্য জায়গা থেকে মালামাল নিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নিতে পারি। আমরা কিন্তু একটা স্পেশাল রেসকিউ টিমও তৈরি করেছি, যেটা পূর্বাচলে আছে। পূর্বাচলে এই টিমটা রাখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে– পূর্বাচল যেহেতু খোলামেলা জায়গা সেখানে ভূমিকম্প হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। এই স্পেশাল টিমটা যেকোনো জায়গায় অ্যাফেক্টেড হোক না কেন তারা সেখান থেকে মুভ করে রেস্কিউ অপারেশন করার জন্য চলে আসবে। একইভাবে ঢাকার বাইরেও প্রত্যেকটা বিভাগে আমাদের এই রেস্কিউ টিম তৈরি আছে।
আছে সীমাবদ্ধতা, দরকার সম্মিলিত প্রয়াস
সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে লে. কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার বলেন, সীমাবদ্ধতা তো অবশ্যই আছে। জনবলের সীমাবদ্ধতা আমাদের রয়েছে, তারপর ইকুইপমেন্টের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সব বাহিনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সীমাবদ্ধতা কতটা তা ডিপেন্ড করবে একটা দুর্যোগে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তার ওপর।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একটা ভূমিকম্পে ২/৪ বা ৫/১০টা ভবন আক্রান্ত হলো, সেখানে আমরা হয়তবা সাপোর্ট দিতে পারব, অপারেশন করতে পারব। কিন্তু চিন্তা করেন, যখন বলা হচ্ছে ৬ লাখ বা ৮ লাখ ভবন ধ্বসে পড়বে তখন বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস কেন, কোনো ফায়ার সার্ভিসেরই এ ক্ষমতা নেই যে এখানে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সার্চ অ্যান্ড রেস্কিউ অপারেশন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। তখন সম্মিলিতভাবে এই যে ভলান্টিয়ার হোক, দেশের মানুষজন হোক, অন্য বাহিনী হোক, সবমিলিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তখন শুধু ফায়ার সার্ভিস এত বড় দুর্ঘটনা, দুর্যোগ একা সামলাতে পারবে না।
ভূমিকম্পের জন্য কোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কি না, দেখে না ফায়ার সার্ভিস
ঢাকা শহরে এই মুহূর্তে কতসংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে? যেগুলো অল্প মাত্রার ভূমিকম্পেও ঝুঁকি তৈরি করবে। ভবন পরিদর্শনে এমন কোনো অবজারভেশন ফায়ার সার্ভিস দেখে কি না–
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, এটা নিয়ে মানুষ ও আপনাদের (সাংবাদিকদের) মধ্যে একটু ইনফরমেশনে ভুল আছে। আমরা কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনায় যেটা ঝুঁকিপূর্ণ সেটা পরিদর্শন করি, বলি। একটা বিল্ডিং যে করা হচ্ছে বা বিল্ডিং হয়েছে, সেখানে ফায়ার সেফটি প্ল্যান কী আছে, ফায়ার প্রটেকশন সিস্টেম কী আছে এই জিনিসগুলো আমরা সাধারণত চেক করে থাকি।
‘আর ভূমিকম্পে একটা ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কি না সেটা দেখার জন্য কিন্তু রাজউক, গণপূর্ত, সিটি কর্পোরেশন আছে, তারা দেখবে। আমরা ভবন দেখি অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ কি না। অবকাঠামোগতভাবে ভবনের কন্ডিশন দেখার এক্সপার্ট বা অথরিটি ফায়ার সার্ভিস নয়।’

এদিকে, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের আশপাশের অঞ্চলে সম্প্রতি ভূমিকম্পের প্রবণতা বেড়ে যাওয়াকে বড় ভূমিকম্পের বার্তা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের আশপাশে মূলত তিনটি টেকটনিক প্লেট এসে মিলিত হয়েছে– ভারতীয় প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট এবং বার্মিজ মাইক্রোপ্লেট। এই তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান। যা এ অঞ্চলকে অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ করে তুলেছে। এতে রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও সিলেটের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর বর্তমান অপরিকল্পিত অবকাঠামোর কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
২০০৯ সালে সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি ও জাইকার যৌথ জরিপে বলা হয়, ঢাকায় ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে এবং ১ লাখ ৩৫ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে ৭ কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ।
ভূমিকম্প গবেষক ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সৈয়দ হুমায়ুন আখতার ২০১৬ সালে এক গবেষণায় বলেন, ভূমিকম্পে ঢাকা মেট্রোপলিটনের এক শতাংশ ভবনও যদি বিধ্বস্ত হয়, তাহলে ৬০০০ ভবন বিধ্বস্ত হবে। ফলে অন্তত ৩ লাখ মানুষ সরাসরি হতাহত হবেন। আর ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার ও সেবার কাজ পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আরও বহু মানুষের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হবে।
জেইউ/এসএসএইচ
