‘খালাম্মা গো আমার সব আগুনে পুড়ছে, সব শেষ’

“ও খালাম্মা গো আমার সব আগুনে পুড়ছে, আমার সব শেষ গো খালাম্মা। কিছুই বাইর করতে পারি নাই গো খালাম্মা। বাচ্চার একটা কাপড় লইয়াও বাইর হইতে পারি নাই। ও খালাম্মা কি করমু এহন আমি। পোলাপাইন লইয়া রাস্তায় আছি গো খালাম্মা।”
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাত ১০ টায় মহাখালী ওয়ারলেস দিয়ে কড়াইল বস্তির যাওয়ার রাস্তায় স্বামী সন্তান নিয়ে বসে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মাজেদা বেগম (৪৪) আহাজারি করছিলেন মোবাইল ফোনে তার খালাম্মার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে গিয়ে।
ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ১৯টি ইউনিটের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাত ১০ টা ৩৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে কড়াইল বস্তির আগুন। স্থানীয়দের দাবি আগুনে বস্তির প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়েছে সঙ্গে রয়েছে দোকান-পাট।
ময়মনসিংহের শেরপুরের মাজেদা সাড়ে তিন বছর ধরে স্বামীসহ পাঁচ ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে কড়াইল বস্তিতে বসবাস করেন। তিনি মহাখালীতে কয়েকটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন আর তার স্বামী সফর আলী (৫০) রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন।
মাজেদা বেগম বলেন, “আগুন লাগার সময় ঘরেই ছিলাম। দুই ছেলে ও মেয়ে আমার সঙ্গে ছিল। আমার স্বামী বাইরে ছিল। আগুন লাগার কথা শুইনা দৌড় দিয়া ঘর থেকে বের হয়ে পোলাপান লইয়া। পরে বাকি তিন পোলারে খুঁজতে গুদারাঘাট আসি। পরে আর ঘরে যাইতে পারি নাই। জামাই কাজ করে আমি কাজ করি এই অল্প টাকা ইনকাম কইরা এই সংসার সাজাইছিলাম। এখন আমরা সব শেষ সব পুইড়া শেষ। ঘর থেকে বাচ্চা গো একটা কাপড় নিয়েও বাইর হইতে পারি নাই। কি থেইকা কি হইয়া গেল এখন আমরা রাস্তায় বইসা রইছি এখন কই যামু আমরা, আমরারে এখন কেডা দেখব।”
এ সময় মাজেদার স্বামী সফর আলী বলেন, “আগুন লাগছে পরে দৌড়াইয়া ঘরে যাইতে চাইছিলাম কিন্তু আগুনের তাপের কারণে ধারে কাছে যাওয়া যায় নাই। কোনমতে আরেকটা ঘরের ছাদে উঠছি ওইটা দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া দেখছি নিজের সংসার পুইড়া যাইতে। বউ করে মানুষের বাসায় কাজ আর আমি করি রাজমিস্ত্রির কাজ। কোনমতে পোলাপান লইয়া সংসার টা চালাইতাছিলাম । এখন আমরা কই যামু এখন আমরা আবার কিভাবে সংসার শুরু করুম। সরকার কি আমরারে কোন সহযোগিতা করব?”
শুধু মাজেদা সফর আলী দম্পতি নয়, কড়াইল বস্তির এই ভয়াবহ আগুনে নিঃস্ব হয়েছে তাদের মতো আরো শত শত পরিবার। কারো পুড়েছে ঘর, ঘরের আসবাবপত্র মালামাল আবার কারও পুড়েছে দোকানপাট। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও যাদের সবকিছু ছিল ছিল সুখের সংসার আজ তারা বসে আছেন খোলা আকাশের নিচে রাস্তায়।

মোমেনা আক্তার (৩৫) তাদের মধ্যে একজন। মোমেনাও করেন গৃহকর্মীর কাজ রাজধানীর গুলশান এলাকায়। তার স্বামী রিকশা চালান। তিনি বলেন, “আগুন লাগার পরেও প্রায় এক ঘন্টা সময় পাইছিলাম। কিন্তু ঘরে বাচ্চাকাচ্চারাও ছিল না আর হেরার বাপও ছিল না। একা একা কিছুই বের করতে পারি নাই। ঘরে ফ্রিজ টিভি সব ছিল। কয়েকটা কাপড়ের বস্তা নিয়ে বাইর হইতে পারছি। সব পুইড়া ছাই হয়ে গেছে আগুন। এখন যে ভিতরে গিয়ে দেখবো কি অবস্থা সেটাও পারতাছিনা। পরিবার লইয়া রাস্তায় বসে আছি ভিতরে যাইতে দিতেছে না।”
তিনি বলেন, “কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকায় আমরা বাসা ছিল। পরিবার নিয়ে আট বছর ধইরা থাকি। কত কষ্ট কইরা তিলে তিলে এই সংসার সাজাইছিলাম। এখন সব শেষ কাউরে কিছু বলার নাই।”
এদিকে বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, আগুনে কম করে হল পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। শতশত পরিবার তাদের সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে। সর্বশেষ বস্তির ক ব্লক পর্যন্ত আগুন পুড়েছে।”
এমএসি/এসএমডব্লিউ