প্রকৌশল শিক্ষার মান উন্নয়নে পরিবেশগত দায়বদ্ধতাও জরুরি : সৈয়দা রিজওয়ানা

দেশের প্রকৌশল শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে শুধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও পরিবেশগত দায়িত্ববোধও থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, প্রকৌশল শিক্ষার প্রকৃত মান তখনই নিশ্চিত হবে, যখন তা পরিবেশ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং জলবায়ু সহনশীলতার মূল্যবোধ প্রতিফলিত করবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরসহ দেশের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রকৌশল উদ্যোগগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত প্রভাব ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, প্রকৌশলীরা যে সিদ্ধান্ত নেন তা দেশের উন্নয়ন ধারা প্রভাবিত করে, তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক দায়িত্ববোধ, পরিবেশ-সচেতনতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাত্ত্বিক শিক্ষা নয়, ব্যবহারিক দক্ষতা, বাস্তব সমস্যার সমাধান ও সমাজের দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন মেনে শিক্ষাদান নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের মতো ভূমিকম্প-ঝুঁকি, নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতা প্রবণ এলাকায় প্রকৌশল পরিকল্পনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিবেচনা করা অপরিহার্য।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আশা প্রকাশ করেন যে সিম্পোজিয়াম থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠ্যক্রম উন্নয়ন, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ জোরদার এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যকর সুপারিশ পাওয়া যাবে, যা দেশে স্থায়ী উন্নয়নে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের অবদান আরও ফলপ্রসূ করবে।
এসময় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাত্ত্বিক শিক্ষার পরিমাণ বেশি হলেও ব্যবহারিক দক্ষতা এবং শিল্পখাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হলে দেশের শিল্প ও অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। দুই দিনের আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের সেং হুয়াং এনডাউড প্রফেসর ড. নুর ইয়াজদানি; ডাবলিন অ্যাকর্ডের চেয়ার প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মেগাত জোহরি মেগাত মোহদ নূর; এবং ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. সাব্বির মোস্তফা খান। বিএইটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. তানভীর মঞ্জুর অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।
সিম্পোজিয়ামের শেষ ভাগে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকৌশল শিক্ষা আধুনিকায়ন ও স্বীকৃতি কাঠামোতে উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও প্রকৌশলীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়, যা শিক্ষার মান উন্নয়নে উদ্দীপনা যোগ করবে এবং প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সমাজ ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধ করার প্রয়াসকে শক্তিশালী করবে।
টিআই/এনএফ