সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ, অপেক্ষা তফসিলের

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপলক্ষ্যে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন আয়োজনের সকল প্রস্তুতি শেষ হওয়ায় এখন সকলের দৃষ্টি তফসিল ঘোষণার দিকে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের বক্তব্য অনুযায়ী, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক থাকলে বুধবার অথবা বৃহস্পতিবারের মধ্যেই ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার লক্ষ্যে বুধবার বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ভাষণ রেকর্ড করতে বলা হয়েছে। সিইসির এই ভাষণেই আগামী সংসদ ভোটের তফসিল ও ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে বলতে ৫, ৮ অথবা ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের সবচেয়ে বেশি সম্ভবনা রয়েছে। তফসিল ও ভোটগ্রহণের দিন নিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। তবে বিকল্প দিন হিসেবে কমিশন চাইলে ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারিকেও বেছে নিতে পারে।
এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদের তফসিল চলতি সপ্তাহে হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আজ (মঙ্গলবার) তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। প্রধান বিচারপতির খাসকামরায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তাদের মধ্যে একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। তফসিল ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তফসিল ঘোষণার জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছে ইসি। আসন বিন্যাস, আইন অনুযাযী রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার যারা থাকবেন তাদেন প্রজ্ঞাপন, বিভিন্ন বিষয়ে ২০টির মতো পরিপত্র জারি হবে। সেখানে মোবাইল কোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি নিয়োগ, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, মনিটরিং সেল গঠন, আইন-শৃঙ্খলার সেল গঠন এগুলোর ফরমেটগুলো রেডি রয়েছে।
একই দিন দুপুরের দিকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পূর্বে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ইসির দায়িত্ব নয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির দায়িত্ব আসবে তফসিল ঘোষণার পর। চূড়ান্ত পোস্টাল ব্যালটে নিষিদ্ধ বা স্থগিত কোনো দলের প্রতীক থাকবে না।
তিনি আরও জানান, তফসিল ঘোষণায় ভাষণের সবকিছু চূড়ান্ত। বুধবার রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাত শেষে সন্ধ্যায় অথবা বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা হবে। এতে রাজনৈতিক দলসহ সকলের সহযোগিতার বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আগামীকাল দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করতে যাবে নির্বাচন কমিশন।
ইসির এক কর্মকর্তা জানান, ভোটগ্রহণের পর রোজার আগে অন্তত সপ্তাহখানেক সময় হাতে রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন। কারণ, ভোটের দিন অনিয়ম, মারামারি বা হানাহানির কারণে যেসব কেন্দ্রে বা আসনে ভোট বন্ধ অথবা স্থগিত করা হবে, সেসব কেন্দ্র বা আসনে এক সপ্তাহের মধ্যে ভোট শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। সেটা যেন রমজানে গিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে চায় কমিশন। এ ছাড়া নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের পর যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পাবে তাদের সরকার গঠন করতেও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। সেটাও যেন রমজানের আগে সম্ভব হয় সে সুযোগও রাখতে চায় ইসি।
আগামী বছর পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে ১৮ বা ১৯ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচন কমিশন যদি সপ্তাহখানেক সময় হাতে রাখতে চায় তাহলে ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে ভোট নিতে হবে। এদিকে শবে বরাতের সম্ভাব্য তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি।
সরকার অন্তত এর আগে নির্বাচন দেবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই শবে বরাতের পর থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের (১৫ তারিখ) মধ্যেই ভোট দিতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি ৫ তারিখ বৃহস্পতিবার শবে বরাতের বন্ধ পড়ে যায় তাহলে এর পরের সপ্তাহের যেকোনো দিন (৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি) ভোট নিতে হবে।
এর আগে দেশে ১২টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৬ বার, বিএনপি ৪ বার ও জাতীয় পার্টি ২ বার জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ প্রথম, সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে; বিএনপি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়। সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দ্বাদশ সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। তবে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ তাদের মেয়াদকাল পূরণ করেছে।
বিগত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর মধ্যে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছিল। এ নির্বাচনে মোট ৮৭ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল। অন্যদিকে, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল। ওই নির্বাচনে মাত্র ২৬.৫ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পেয়েছিল।
এসআর/এনএফ