মোহাম্মদপুরে স্কুলে হামলা চালিয়ে দখলচেষ্টার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় ইংলিশ মিডিয়াম এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে মালিকানা নিয়ে বিরোধ, অনিয়ম ও দখলচেষ্টার অভিযোগের ভিত্তিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার দুপুরে স্কুলের লালমাটিয়া প্রধান শাখায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হামলা বলে দাবি করেছেন।
আখতারুজ্জামান বলেন, সাবেক প্রিন্সিপাল আনিসুর রহমান সোহাগের নির্দেশে একদল বাহিনী সকালে স্কুলে হামলা চালায়। এতে শিক্ষক-কর্মচারীরা লাঞ্ছিত ও আহত হন। এ সময় স্কুলে পরীক্ষা চলছিল। ছোট ছোট বাচ্চারা এমন ঘটনা জীবনে দেখেনি। অভিভাবকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, স্কুলে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান জানান, ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করি। একই বছর পিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বন্ধ হওয়ার পর সেখানকার কিছু শিক্ষার্থী তার প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়। এরপর থেকে লালমাটিয়া, মিরপুর ও উত্তরায় এই তিনটি শাখা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সোহাগকে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয় বলে জানান মো. আখতারুজ্জামান। তিনি অভিযোগ করেন, সোহাগের জমা দেওয়া শিক্ষাগত সনদ জাল, যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অবৈধ ঘোষণা করে। পরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডও তাকে অপসারণের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানে আনিসুর রহমান সোহাগের ৪২ জন আত্মীয় কর্মরত, যারা বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত বলে দাবি চেয়ারম্যানের।
চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান জানান, সোহাগ নয় মাস ধরে স্কুলে না আসলেও প্রিন্সিপাল পরিচয়ে বেতন নিয়েছেন। স্কুলের ব্যাংকের সিগনেচার অথরিটি আনিসুর রহমান হওয়া এবং তার পক্ষে এক পরিচালক থাকায় জটিলতার কারণে বেতন বন্ধ করা যায়নি।
আখতারুজ্জামান জানান, ১৩ অক্টোবর মালিকানা ও পরিচালনা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব মেটাতে একটি আরবিট্রেশন বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুক্তার আহমেদসহ সদস্যরা আড়াই মাস তদন্ত চালান। সমাধান চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগ মুহূর্তে দুষ্টুচক্র পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে আজ সকালে স্কুলে হামলা চালায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সোহাগ মূল প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন না। তৎকালীন রাজনৈতিক চাপে তাকে বিনা পুঁজিতে প্রতিষ্ঠানে নিতে হয়েছিল।
এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, বরিশালের ঝালকাঠির একজন আওয়ামী লীগ নেতার চাপেই সোহাগকে যুক্ত করা হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িত সব কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হবে। ঘটনার পর পুলিশ আসে এবং সিসিটিভি ফুটেজ নেওয়ার চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছে থাকায় সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে সংগ্রহ করে সিসিটিভি ফুটেজ প্রশাসনের কাছে দেওয়া হবে। তার পাশাপাশি জানুয়ারি মাস থেকে দুটি স্কুলবাস চালু করা হবে। তাছাড়া স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হবে। মালিকপক্ষ ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা নেবে না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আখতারুজ্জামান বলেন, বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলার আসামি স্কুলের এক পরিচালক গোলাম মোস্তফাকে স্কুলের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মোস্তফার লোকজন জড়ো হয়ে পুলিশকে মারধর করে এবং আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করলে সেই মামলায় এক নম্বর এজাহারনামীয় আসামি আনিসুর রহমান সোহাগ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আনিসুর রহমান বলেন, আমরা হামলা করিনি, তারাই আমার সিকিউরিটি গার্ডকে মারপিট করেছে। এখানে আখতারুজ্জামান ওয়ান থার্ড পার্টনার, আমিও ওয়ান থার্ড পার্টনার। এখানে আমিও অংশীদার, সেও অংশীদার। এখানে দখলের কোনো বিষয় নেই।
আপনি এটার অধ্যক্ষ ছিলেন, পরবর্তীতে ইউজিসি থেকে আপনাকে বাদ দেওয়া হয় কেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সার্টিফিকেট নাকি ভুয়া ছিল, পরবর্তীতে সেগুলো ইউজিসি থেকে যাচাই-বাছাই করা হয়। যাচাই-বাছাই করে দেখেছে, আমার সার্টিফিকেট ঠিক আছে।
এসএএ/এমজে