গুলশানের ফ্ল্যাট ঘুষ : টিউলিপ ও রাজউক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট

ঢাকার গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর এবার তার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ রিজওয়ান সিদ্দিক এবং রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা সরদার মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিটের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন।
তবে এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামানের নাম থাকলেও এ সংক্রান্ত আপিল কেস পেন্ডিং থাকায় আপাতত তাকে বাদ দিয়ে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক এ কে এম মুর্তজা আলী সাগর শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করবেন বলে জানা গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে তৎকালীন বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরী গুলশানে ১ বিঘা ১৯ কাঠা ১৩ ছটাক আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ পান।
সরকারি ইজারা চুক্তি অনুযায়ী, ৯৯ বছরের মধ্যে ওই প্লট হস্তান্তর বা ভাগ করে বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। তবে ১৯৭৩ সালে তিনি মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়াকে আমমোক্তার মাধ্যমে প্লটটি হস্তান্তর করেন। এরপর প্লটটি ভাগ হয়ে বিক্রি হয় এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ শুরু হয়। জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার সন্তানদের মধ্যে বিরোধ শুরু হলে মামলা হয়।
মামলা চলমান অবস্থায় এবং হস্তান্তর নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় রাজউকের সংশ্লিষ্ট আইন উপদেষ্টারা ইস্টার্ন হাউজিংকে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের অনুমোদন দেন-যা অবৈধ ছিল। কারণ কোম্পানিটি লিজ হোল্ডার বা বৈধ প্রতিনিধি ছিল না। রাজউকের রেকর্ড অনুযায়ী, ৯৯ বছরের ইজারার শর্তে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে প্লট হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। তবুও ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার করে ওই প্লট ভাগ করে ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ও হস্তান্তরের অনুমোদন দেওয়া হয়। ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে ‘অবৈধভাবে’ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হয় এবং এর বিনিময়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ’অবৈধ পারিতোষিক’ হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে ’বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেন। এজাহারে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার অনুমোদনপূর্বক ও ফ্ল্যাট বিক্রয়ের অনুমোদন করিয়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে ও নিজে অবৈধ সুবিধা নিয়ে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৪০৯/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭এর ৫(২) ধারায় চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, অবৈধ সুবিধা নেওয়ার প্রমাণ হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের পত্রে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নিয়েছেন মর্মে উল্লেখ আছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯/০৫/২০০১ তারিখ থেকে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ওই ফ্ল্যাটটি দখলে ছিলেন। তিনি তার ২০১৫-২০১৬ করবর্ষে ফ্ল্যাট নং-B/201, plot no#NE(A)-11B, Gulshan, Dhaka তার ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিককে হেবা করা হয়েছে বলেও প্রমাণ মিলেছে। আর ফ্ল্যাটটি এখনো তার নামে নামজারি রয়েছে এবং তিনিই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
একই অভিযোগে শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল মামলা করে সংস্থাটি। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ রাজউকের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান ও সর্দার মোশারফ হোসেন।
মামলার তদন্তকালে গত ২২ জুন ও ১৪ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি দিয়েছিল তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। ওই সময়ে পৃথক নোটিশে একই মামলার অপর আসামি রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ খসরুজ্জামান ও সর্দার মোশাররফ হোসেনকেও তলব করা হয়েছিল।
এর আগে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট দুর্নীতির মামলায় টিউলিপসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার রায় দেয় আদালত।
আরএম/এসএম