হাদির পরিবারকে সান্ত্বনা প্রধান উপদেষ্টার, সর্বোত্তম চিকিৎসার আশ্বাস

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির পরিবারকে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি হাদির হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন।
আজ (শনিবার) সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আব্দুল্লাহ আল জাবের, ফাতিমা তাসনিম জুমা ও মো. বোরহান উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।
ওসমান হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সারা দেশ তার জন্য দোয়া করছে। তার সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতে সবাই চেষ্টা করছে। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় যদি দেশের বাইরে পাঠাতে হয়, যেখানে পাঠানোর প্রয়োজন হবে সরকার সেখানেই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।’
ওসমান হাদির বোন প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘সে (হাদি) ছোটবেলা থেকেই দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসত। ছোটবেলা থেকেই সে বিপ্লবী। বিদ্রোহী কবিতা তার প্রিয়, সে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসত। তার ১০ মাসের একটি সন্তান আছে। হাদি আমাদের মেরুদণ্ড।’
‘ওর অনেক কাজ, ওকে বেঁচে থাকতে হবে। আপনারা বিপ্লবী সরকার, যে করেই হোক জুলাই বিপ্লবীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে,’ বলেন তিনি।

অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা জাবের বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিল, ওসমান হাদি বাসায় ফিরে যায়নি। সে জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করত এবং জুলাই বিপ্লব টিকিয়ে রাখার জন্য দিনরাত কাজ করত। যে ছেলেটা গুলি করেছে, শুনতে পাচ্ছি সে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল, কোন প্রক্রিয়ায় সে জামিন পেয়েছে সেটা তদন্ত করুন।’
জুলাই যোদ্ধাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মঞ্চের আরেক নেত্রী ফাতেমা তাসনিম জুমা।
এমন নৃশংস হামলার সাথে যারা জড়িত তাদের পুরো চক্রকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এ ঘটনার আদ্যপান্ত বিশ্লেষণ করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
হাদির সর্বশেষ পরিস্থিতি
গতকাল দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যার পর নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।
ওসমান হাদির চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত একাধিক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলা বহুমুখী (মাল্টিডিসিপ্লিনারি) মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আপাতত নতুন কোনো অস্ত্রোপচার বা হস্তক্ষেপ করা হবে না, পর্যবেক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাই চলবে ওসমান হাদির।
বৈঠকের পর মেডিকেল বোর্ড জানায়, রোগীর অবস্থা বর্তমানে স্ট্যাটিক, অর্থাৎ বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই মুহূর্তে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে, নতুন কোনো সার্জিক্যাল হস্তক্ষেপ এখন করা হবে না।
চিকিৎসকরা আরও জানান, গুরুতর ব্রেইন ইনজুরির কারণে রোগীর অবস্থা এখনও অত্যন্ত সংবেদনশীল। যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে। তাই রোগীকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে রাখা হয়েছে এবং সব গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকবে।
এমএসআই/এনএফ