দালালমুক্ত মেডিকেল সার্ভিস-পেনশন সুবিধাসহ ১৯ দাবি রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের

প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট সহজ করা, দালালমুক্ত মেডিকেল সার্ভিস, স্বল্প সুদে ঋণ, বিমানবন্দরে হয়রানি বন্ধ, টিকিট মূল্য নিয়ন্ত্রণ, পেনশন সুবিধা, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণসহ ১৯ দফা দাবি জানিয়েছে ‘আমরা সচেতন রেমিট্যান্সযোদ্ধা’।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী সাংবাদিক শিপন, কাউছার, ইলিয়াস হোসাইন, ফখরুল ইসলাম, আল মামুন, ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর সরকার, আব্দুর রহিম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রায় দুই কোটি প্রবাসী দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখলেও তাদের ন্যায্য দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত। বিভিন্ন সরকারের কাছে দাবি জানানো হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসীরা ভোটাধিকার পেয়েছে। তবে প্রবাসীদের কল্যাণে সরকারের দৃশ্যমান ভূমিকা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। রেমিট্যান্স বন্ধের ঘোষণার মাধ্যমে তারা পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড়ো শত্রু অনেক সময় বাংলাদেশিই। জুলাই আন্দোলনের পর বিদেশে গিয়ে কিছু অপরাধী প্রবাসীদের অপহরণ, চাঁদাবাজি ও হত্যার সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। এসব বিষয় সরকার জানলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
মহিউদ্দিন রনি বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচিত সরকার আসবে। তবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের উচিত প্রবাসীদের এসব সমস্যা সমাধান করে যাওয়া।
সংগঠনের দাবিগুলো হলো-
১. পাসপোর্ট সরবরাহ : বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য স্বল্প সময়ে ও হয়রানিমুক্ত পাসপোর্ট সরবরাহ করতে হবে।
২. নিম্ন সুদে ঋণ : ভিসার কপি দিয়ে জামানত ছাড়া, স্বল্প সুদে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ন্যূনতম ৩ লাখ টাকা ঋণ দিতে হবে।
৩. দালালমুক্ত মেডিকেল সার্ভিস : বিদেশগামী যাত্রীদের মেডিকেল পরীক্ষায় দালালমুক্ত ও সঠিক রিপোর্টের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৪. বিমানবন্দরের সম্মান : যাত্রীদের সম্মান ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করে বিদেশে আসা-যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৫. বাংলাদেশি মিশন সেবা : বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতে প্রবাসীদের সম্মানজনক ও দ্রুত সেবা দিতে হবে।
৬. বেতন ও সুযোগ সুবিধা পর্যবেক্ষণ : প্রবাসী কর্মীদের কোম্পানিতে বেতন, আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছে কিনা তা বাংলাদেশি মিশনগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৭. ভিসা যাচাই : বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার জন্য ভিসা পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির যাচাই-বাছাই করতে হবে।
৮. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ : সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খরচের মধ্যে কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯. টিকিট মূল্য নিয়ন্ত্রণ : সব এয়ারলাইন্সের টিকিট মূল্য গন্তব্যস্থান অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে।
১০. বিশেষায়িত হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ : প্রবাসীদের জন্য সব বিভাগীয় শহরে একটি করে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করতে হবে।
১১. সম্পদ নিরাপত্তা : প্রবাসীদের পরিবারের সম্পদ ও জান-মালের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১২. দক্ষ কর্মী পাঠানো : বিদেশে কর্মী পাঠানোর আগে তাদেরকে কেনো কাজের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী পাঠাতে হবে।
১৩. জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ : সব প্রবাসীকে তাদের কর্মরত দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করতে হবে।
১৪. পেনশন সুবিধা : যারা ১০ বছরের বেশি প্রবাসে কর্মরত রয়েছেন, তাদেরকে পেনশনের আওতায় আনতে হবে।
১৫. অসুস্থ কর্মী ও মরদেহের খরচ : অসুস্থ কর্মী ও প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সব খরচ নিয়োগকর্তাকে প্রদান করতে বাধ্য করতে হবে, অন্যথায় বাংলাদেশ সরকারকে নিজ খরচে এই কার্য সম্পাদন করতে হবে।
১৬. গণশুনানি আয়োজন : প্রবাসী কর্মীদের নিয়ে বাংলাদেশি মিশনগুলো প্রতি ৩ মাস পর পর গণশুনানির আয়োজন করতে হবে।
১৭. বৈধতা নিশ্চিতকরণ : বিভিন্ন দেশে যে সব প্রবাসীরা অবৈধ হয়ে আছেন, তাদেরকে বৈধ করার চেষ্টা চালাতে হবে, অন্যথায় তাদেরকে দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৮. অবৈধ পথে কর্মী যাওয়া বন্ধ : যে সব দেশে বাংলাদেশ সরকার কর্মী পাঠায় না, সে সব দেশে অবৈধ পথে ঝুঁকি নিয়ে কর্মী যাওয়া বন্ধ করতে হবে।
১৯. মতবিনিময় : অভিবাসন খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতি মাসে অন্তত একবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বা সচিবের মতবিনিময় করতে হবে।
ওএফএ/জেডএস