তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য : বিটিসিএ

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানিগুলোর সরাসরি ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল এডভোকেটস (বিটিসিএ)। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিটিসিএ জানায়, সম্প্রতি তামাক ব্যবসায় জড়িত কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির যৌথ বিবৃতি প্রমাণ করে যে তারা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রণীত আইনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
বিটিসিএ জানায়, তামাক কোম্পানি কখনোই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অংশীজন হতে পারে না, কারণ তামাক কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং জনস্বাস্থ্যের স্বার্থ পরস্পরের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিরোধী। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (ডাব্লিউএইচও এফসিটিসি)-এর সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে অনুচ্ছেদ ৫.৩ বাস্তবায়নে আইনগত ও নৈতিকভাবে বাধ্য। এই অনুচ্ছেদে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া থেকে তামাক শিল্পকে দূরে রাখার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
তামাক কোম্পানিগুলো তাদের বিবৃতিতে কর্মসংস্থান, রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ পরিবেশ ও অবৈধ বাজার বৃদ্ধির যে দাবি তুলেছে, তা বিভ্রান্তিকর, অতিরঞ্জিত এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণবিহীন। দেশি ও আন্তর্জাতিক গবেষণায় বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের ফলে ধূমপানের হার হ্রাস পায়, তামাকজনিত রোগে মৃত্যু কমে এবং দীর্ঘমেয়াদে সরকারের স্বাস্থ্যব্যয় ও অর্থনৈতিক ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। ধোঁয়াবিহীন নিকোটিন ও তামাকজাত পণ্যকে তথাকথিত কম ক্ষতিকর বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করাও একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তি। এসব পণ্য মূলত শিশু ও তরুণদের নিকোটিনে আসক্ত করার নতুন কৌশল, যা ভবিষ্যতে সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়িয়ে দেবে। বহু দেশে এ ধরনের পণ্যের কারণে তরুণদের মধ্যে নিকোটিন আসক্তি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিটিসিএ আরও জানায়, তামাক কোম্পানিগুলো যাদের জীবিকার কথা বলছে, বাস্তবে তারাই তামাক চাষ, উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ও আর্থসামাজিক ক্ষতির শিকার। প্রতিবছর বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগে লক্ষাধিক মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে এবং বিপুল অর্থ চিকিৎসা ব্যয়ে ব্যয়িত হয়, যা তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া সিগারেট কোম্পানিগুলো প্যাকেটে লিখিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে সিগারেট বিক্রি করে। তরুণদের নিকট বিক্রয় অব্যাহত রাখতে খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধের বিরোধিতা করছে।
বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল এডভোকেটস সরকারের কাছে জোরালোভাবে আহ্বান জানাচ্ছে- তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির সব ধরনের প্রভাব ও হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে, ডাব্লিউএইচও এফসিটিসি-এর অনুচ্ছেদ ৫.৩ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত অনুমোদন ও কার্যকর করতে হবে। জনস্বাস্থ্য, বিশেষ করে শিশু ও তরুণদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
বিটিসিএ বিশ্বাস করে, একটি শক্তিশালী, প্রমাণভিত্তিক ও জনস্বার্থকেন্দ্রিক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনই একটি সুস্থ, উৎপাদনশীল ও টেকসই বাংলাদেশের ভিত্তি। এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল এডভোকেটস সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিবৃতিদাতারা হলেন- বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল এডভোকেটসের আহ্বায়ক ইকবাল মাসুদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমান, স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশের মডারেটর আমিনুল ইসলাম সুজন, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ফারহানা জামান লিজা, উন্নয়ন কর্মী আবু রায়হান, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ সামিউল হাসান সজীব, সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল ও পরিবেশ উন্নয়ন কর্মী সামিউল হাসান সজীব।
জেইউ/এআরবি